ষ্টাফ রিপোর্টার।। কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে আলোচিত অনলাইন বিনিয়োগ প্লাটর্ফম ‘এমটিএফই’ অ্যাপে গ্রাহকের বিনিয়োগের শত কোটি টাকা মেরে ওমরা পালনে সৌদি আবার গেছেন মিজানুর রহমান ও মাসুম আলী নামে প্রতিষ্ঠানটির দুই পরিচালক। মিজানুর কুষ্টিয়ার এমটিএফইর প্রধান সিইও পদে ছিলেন। তার পরের স্থান মাসুম আলীর।
এদিকে পরিচালকদের ওমরা পালনের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের তথ্যমতে, কুমারখালীসহ জেলার প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার গ্রাহক ৮ হাজার থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছেন। গত শুক্রবার থেকে এমটিএফইর সব কার্যক্রম হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কুমারখালী উপজেলার দুই হাজার মানুষ প্রায় শতকোটি টাকা খুইয়েছেন। এই অ্যাপে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, ড্রাইভার, কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিনিয়োগকারী করেছেন। বিপুল লভ্যাংশের মাধ্যমে রাতারাতি কোটিপতি হবার আশায় টাকা জমা দেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমারখালী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সিঙ্গার প্লাজার দ্বিতীয় তলায় অফিস নিয়ে প্রায় দেড় বছর ধরে ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন মাসুম ও মিজান। এই দুজনের মাধ্যমে প্রায় দুই হাজার মানুষ বিনিয়োগ করেছ।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, কুমারখালী ‘এমটিএফই’ এর মূল হোতা পৌরসভার বাটিকামারা মধ্যপাড়ার মসলেম উদ্দিনের ছেলে মিজানুর রহমান। তিনি স্থানীয় ফেমাস ফুলকুঁড়ি বিদ্যালয়ের পরিচালক পদে আছেন। আর তার সহকারী ছিলেন পৌরসভার ঝাওতলা এলাকার তোফাজ্জেলের ছেলে সাবেক পুলিশ কনস্টেবল মো. মাসুম আলী। তিনি পুলিশ সদর দপ্তরের আইটি সেক্টরে চাকরি করতেন। পরে চাকরি ছেড়ে এসে ‘এমটিএফই’ এর ব্যবসার সাথে যুক্ত হন।
গত ১১ আগস্ট মিজানুর ও মাসুম সৌদি আরবে ওমরা পালন করতে যান। তারপর থেকে শুরু হয় অ্যাপটিতে বিভিন্ন সমস্যা। সাথে গ্রাহকদের কমিশনও কমে যায়। এরপর গত ১৮ আগস্ট থেকে অ্যাপসটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার কুমারখালী সিইও মিজানুর রহমানের বাড়িতে গেলে তার স্ত্রী সুমী খাতুন জানান, মিজানুর ওমরা করতে গেছেন। তিনি এসব বিষয়ে কোনোভাবেই কথা বলবেন না। মিজানুর আসলে তার সাথে কথা বলতে বলেন তিনি।
কুমারখালী পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের ঝাউতলা এলাকায় আরেক সিইও মাসুম আলীর সাথে বাড়িতে গেলে তার মা রেখা খাতুন বলেন, আমার ছেলে ওমরাহ করতে গেছে। আগে পুলিশের চাকরি করত। পরে চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করে। তিনি নিজেও এতে টাকা বিনিয়োগ করেছেন।
এ বিষয়ে কুমারখালী থানার ওসি মো. আকিবুল ইসলাম জানান, আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পেরেছি এই সম্পর্কে। তবে এ বিষয়ে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি।
সিআইডি ও ডিবি সূত্রে জানা যায়, এমটিএফইর প্রতারণার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক ইউনিট কাজ করছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে ডিবি এবং সিআইডিও কাজ করছে। তাদের প্রাথমিক তদন্তে এমটিএফর বেশ কয়েকজন রিপ্রেজেনটেটিভ ও মার্কেটিংয়ের লোকজনের সন্ধান পাওয়া গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ নামে ক্রিপ্টোকারেন্সি (যেমন- বিট কয়েন) ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম এমটিএফইর প্রতারণা নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা ও তথ্য পেলেও এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ কিংবা মামলা পাওয়া যায়নি। তবে মামলা না পেলেও এ বিষয়ে ছায়াতদন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম ছিল বায়বীয়। তারা প্রতারণার জন্য কোনো পণ্যের ব্যবহার করেনি অন্যান্য এমএলএম কোম্পানির মতো। তারা শুধু অ্যাপের মাধ্যমে এই প্রতারণা করেছে।
প্রশাসন বলছে, সিইওদের বিষয়ে সব তথ্য নেওয়া হচ্ছে। গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে আরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কেউ লিখিত অভিযোগ ও মামলা করলে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে।
অন্যদিকে এমটিএফইর বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো ও বাংলাদেশে এদের রিপ্রেজেনটিভদের আটকের বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ।
সিআইডি ও ডিবি সূত্রে জানা যায়, এমটিএফইর প্রতারণার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক ইউনিট কাজ করছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে ডিবি এবং সিআইডিও কাজ করছে। তাদের প্রাথমিক তদন্তে এমটিএফইর বেশ কয়েকজন রিপ্রেজেনটেটিভ ও মার্কেটিংয়ের লোকজনের সন্ধান পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশে এমটিএফইর কত গ্রাহক আছে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেনি। তবে এমটিএফইর হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে মোট ৮ লাখ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে তাদের অ্যাপে। শুধু বাংলাদেশ নয়; দুবাই, ওমান, কাতার সৌদি আরবের মতো দেশগুলোতে কর্মরত বাংলাদেশিরাও এমটিএফইতে বিপুল পরিমাণে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। বাংলাদেশে তাদের কোনো অফিস নেই।