ষ্টাফ রিপোর্টার।। অবশেষে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার ‘বিতর্কিত’ অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নাজিম উদ্দিন মজুমদারকে সরিয়ে সিটিএসবিতে বদলি করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে হেফাজতে নির্যাতন, হুমকি, চাঁদাবাজি, জমি দখলে সহায়তা, হত্যাচেষ্টাসহ ছিল বিস্তর অভিযোগ। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেও পৌঁছেছে ওসির নামে অভিযোগ।
রোববার (২০ আগস্ট) সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বদলি করা হয়।
জানা যায়, খুলশী থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্বরত সন্তোষ কুমার চাকমাকে পাঁচলাইশ থানায় বদলি করা হয়েছে। এছাড়া কোতোয়ালি থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রুবেল হাওলাদারকে খুলশী থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া সিটিএসবি’র পুলিশ পরিদর্শক এআইএম তৌহিদুল করিমকে চকবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। সিটিএসবির আরেক পুলিশ পরিদর্শক রফিক উল্লাহকে পরিদর্শক (প্রসিকিউশন) হিসেবে সিএমপিতে বদলি করা হয়েছে। সিএমপির পুলিশ পরিদর্শক (প্রসিকিউশন) মো. আতিকুর রহমানকে ডিবি উত্তর বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মায়ের ডায়ালাইসিস করাতে গিয়ে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের রোষানলে পড়া সৈয়দ মুস্তাকিমকে রিমান্ড ছাড়াই পুলিশি হেফাজতে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। থানার একটি কক্ষে তাঁকে বেধড়ক পেটানোসহ পুরুষাঙ্গে আঘাত করা হয়। এরপর টানা দুদিন তার পুরুষাঙ্গ থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। এছাড়া দাড়ি নিয়ে কটুক্তি করেও তাকে পেটানো হয়। পুলিশি নির্যাতনের পর মুস্তাকিমের দুপায়ের মাংসে পচন ধরে।
এ ঘটনার পর তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ (সিএমপি)। সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) মাহতাব উদ্দীনকে প্রধান করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আলী হোসেন ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল খালেককে রাখা হয় কমিটিতে। এরপর ভুক্তভোগী মোস্তাকিম ওসির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করতে গেলে আদালত পাঁচলাইশ থানায় মামলার নির্দেশ দেন। মামলার পর গ্রেপ্তার এড়াতে ৮০ দিন নিরুদ্দেশ থাকেন ওসি নাজিম।
পরে কর্মস্থলে এসে আবারও জড়িয়ে পড়েন অপরাধে। এক বিধবা গৃহবধূর জমিসহ বিল্ডিং আত্মসাতে সহায়তা ও ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে ওসি নাজিমের বিরুদ্ধে আবারও মামলা হয় চট্টগ্রামের একটি আদালতে। এ মামলাকে ক্রিমিনাল মামলা হিসেবে আমলে নিয়ে চট্টগ্রাম পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআইকে) তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। সেই মামলার তিনদিন পর বিতর্কিত ওসি নাজিদের বিরুদ্ধে আসে বদলির আদেশ।
অভিযোগে বলা হয়, আদালতের নিষেধাজ্ঞা আদেশও তিনি তোয়াক্কা করেন না। যদি ওসির নির্দেশ অমান্য করে তবে ভুক্তভোগীদের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারের ভয় দেখানো হয়।
এর আগে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমিতে বালু ভরাটে সহযোগিতার অভিযোগ উঠে পাঁচলাইশ থানার এই ‘বিতর্কিত’ ওসির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর ভুক্তভোগী চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার বরাবর ওসি-এসআইসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন।
গৃহবধূর ভূমি দখলে ভূমিদস্যু চক্রকে সহায়তা দেওয়া, মাদক-জুয়াকাণ্ডে মাসোহারা নেওয়ার ঘটনায় সমালোচিত ওসি নাজিম অস্বাভাবিক এক ঘটনার জন্ম দিয়ে আবারও আলোচনায় আসেন। মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি নালিশি মামলা করেন হোসনে আরা বেগম নামে এক নারী। আদালতের আদেশে মামলা রুজু হয়। আর সেই আদেশ অনুযায়ী বাদী হন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। সেই মামলাতেই এজাহার জমা নেয়নি পাঁচলাইশ থানা। অথচ এজাহার ছাড়া মামলা দায়েরের কোনো সুযোগ নেই। এতে আইনগত ত্রুটি রয়ে যায়। এমন অস্বাভাবিক ঘটনায় শেষপর্যন্ত আদালতের কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন মজুমদার। সেসময় আদালতের কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে পার পেয়ে যান তিনি।
প্রকাশক/সম্পাদক :- শাওন আমিন।। ব্যাবস্থাপনা সম্পাদক :- মোঃ গিয়াস উদ্দিন।। নির্বাহী সম্পাদক :- ঝড় আমীন।। প্রধান কার্যালয় :- হালিশহর, চট্রগ্রাম। মুঠোফোন :- +৮৮০১৭১২০৬১১৬৩ ঢাকা কার্যালয়:-বাসা নং ৫১/৩,ধানমন্ডি ৩/এ, ঢাকা।-১২০৯ মুঠোফোন :- +৮৮০১৭১২৪১৫৮৫৩,+৮৮০১৫৮০৮২০৬৬৩,+৮৮০১৭১২০৬১১৬৩
E-mail :- newszhor@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত. বাংলাদেশ হোস্টিং