জেলা প্রতিনিধি, পঞ্চগড়।।‘প্রতিটি প্রাণ মূল্যবান, আত্মহত্যা নয় বাঁচতে শিখি’ এই স্লোগান নিয়ে হেঁটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ভ্রমণ করেছেন আল ইমরান শাওন-শারাবান তহুরা শান্তা দম্পতি। ৯২৭ কিলোমিটার পথ হেঁটে শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্টে ভ্রমণ শেষ করেন তারা।
শাওন ও শান্তা বলেন, গত ২৭ জুন আমরা টেকনাফ থানায় চিঠি দিয়ে চলে যাই টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে। পরদিন ২৮ জুন থেকেই শুরু করি হেঁটে ভ্রমণ। প্রথম দিন শাহপরীর দ্বীপ থেকে বড় ডেইল পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার হাঁটি। সেখানে থাকার জায়গা না পাওয়ায় মরিসবুনিয়া নামে একটি স্কুলের নৈশ প্রহরীর বাড়িতে রাতযাপন করি। সে রাতে পাহাড়ি হাতি আমাদের থাকা স্থানসহ আশপাশের জায়গায় আক্রমণ করে। আমরা গভীর রাতে সবাই দৌড়াদৌড়ি করে স্কুলের পাকা বিল্ডিংয়ে আশ্রয় নিই।
পরদিন ছিল ঈদের দিন। আমরা ঈদের দিন ৩৬ কিলোমিটার হেঁটে বড় ডেইল মরিশবুনিয়া স্কুল থেকে ইনানি বিচ পর্যন্ত আসি। এ সময়টাতে আমরা পুরোটা পথ মেরিন ড্রাইভের অস্বাভাবিক রোদ আর সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আসি। ঈদের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে ১০ দিনে ৪০০ কিলোমিটার একবারে হাঁটি। এরপর অফিসের ব্যস্ততা, মায়ের অসুস্থতা ও পারিবারিক কিছু কারণে কয়েক সপ্তাহ পর আবার সপ্তাহের ছুটির দিনে শুরু করি হাঁটা। এভাবে আমরা নীলফামারী রেলস্টেশন পেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে উত্তরের সীমান্ত তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত পৌঁছে ভ্রমণ শেষ করি।
জানা যায়, শারাবান তহুরা শান্তা পেশায় একজন ব্যাংকার। ট্রাস্ট ব্যাংকের ঢাকার খাজা গরিবে নেওয়াজ শাখার জুনিয়র অফিসার হিসেবে কাজ কর্মরত তিনি। অপরদিকে তার স্বামী আল ইমরান শাওন একজন আর্কিটেক্ট। মন্ডল গ্রুপ অব কোম্পানিতে আর্কিটেক্ট হিসেবে কাজ করেন। চাকরির ফাঁকে ছুটির সময়গুলোতে ঘুরে বেড়ান বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গাগুলোতে। তারা আন অফিশিয়ালি বাংলাদেশের ১ম সর্বোচ্চ চূড়া সাকা হাফং, ২য় সর্বোচ্চ জোতলাং, ৪র্থ সর্বোচ্চ জোগী হাফং, তাজিংডন, কেওক্রাডং ও বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরেছেন।
হেঁটে ভ্রমণের বিষয়ে জানতে চাইলে শান্তা দৈনিক ঝড় কে বলেন, কিশোর-কিশোরীদের অনাকাঙিক্ষত আত্মহত্যার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে আমাদের এই ইভেন্ট জার্নি ছিল। আমরা পথে পথে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। এর মধ্য দিয়েই নিজের দেশকে খুব কাছ থেকে দেখতে হেঁটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় এসেছি। এ জার্নিতে সব থেকে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো শারীরিক সুস্থতা। তবে মানসিক শক্তি দিয়ে সেটা অতিক্রম করেছি। আমার খুব কাছের কিছু বন্ধু ও ট্রাভেল গ্রুপ আউটডোর বিডির স্বত্বাধিকারী জুয়েল রানা ভাই খুব সহায়তা করেছেন। কিছু কিছু জায়গায় আমার স্বামী শাওন বেশি সামনে চলে গেলে আমি পেছনে একা হাঁটতে গিয়ে মেয়ে হিসেবে বুলিংয়ের স্বীকার হয়েছি। তবে অনেক উৎসাহও পেয়েছি।
তিনি বলেন, আমি যখন ব্যাংকে চাকরির আগে টিএমএসএস পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের লেকচারার ছিলাম। তখন আমার এক ছাত্র মিনহাজুল ইসলাম, সে নবম শ্রেণিতে পড়তো। মহামারি করোনার সময় লম্বা ছুটিতে সে মানসিকভাবে ঠিক না থাকতে পেরে আত্মহত্যা করেছে। সে আত্মহত্যার পর থেকেই সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে আমাদের মাথায় এই চিন্তা আসে। সে চিন্তা থেকেই আমরা ভ্রমণে বের হয়ে তা সফল করতে পারলাম। আমাদের এই ভ্রমণে কিশোর, আজিজ, এহসান,নাজমুল, টুসি, আরিফ, আজিজ ও আমার কলিগরাও অনেক সহায়তা করেছেন। আমার মা ও শাশুড়ি এ বিষয়ে যথেষ্ট পজিটিভ ছিলেন। শুরুর দিকে দিকে প্রবাল দাদা আমাদের রুট প্ল্যানে হেল্প করেছেন। তিনি আগে টেকনাফ টু তেঁতুলিয়া কমপ্লিট করেছিলেন।
আউটডোর বিডির ফাউন্ডার জুয়েল রানা বলেন, আমি ঘুরতে ভীষণ পছন্দ করি। আমরা তো অনেকভাবে ঘুরাঘুরি করতে পারি। গাড়িতে, বিমানসহ নানাভাবে। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি স্বনির্ভরভাবে ঘুরাঘুরি করতে। সে পরিকল্পনা করেই আমি আউটডোর বিডি নামে প্রতিষ্ঠান খুলেছি। ঘুরাঘুরির জন্য যেসব জিনিস প্রয়োজন হয় তা আমরা প্রভাইড করি। যখন জানলাম শান্তা ও শাওন হেঁটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ভ্রমণ করবে। আমরা চেষ্টা করেছি তাদের এ ভ্রমণে সাপোর্ট দিতে। আমি হয়তো হেঁটে তেঁতুলিয়ায় আসিনি, তবে আমি তাদের পাশে সার্বক্ষণিক সাপোর্টে ছিলাম। যাদের এ রকম ঘুরাঘুরির স্বপ্ন রয়েছে, তারা জানাতে পারেন। আমরা আউটডোর বিডি থেকে তাদেরকে উৎসাহিত করে সেই ভ্রমণকে সফল করার চেষ্টা করি।
প্রকাশক/সম্পাদক :- শাওন আমিন।। ব্যাবস্থাপনা সম্পাদক :- মোঃ গিয়াস উদ্দিন।। নির্বাহী সম্পাদক :- ঝড় আমীন।। প্রধান কার্যালয় :- হালিশহর, চট্রগ্রাম। মুঠোফোন :- +৮৮০১৭১২০৬১১৬৩ ঢাকা কার্যালয়:-বাসা নং ৫১/৩,ধানমন্ডি ৩/এ, ঢাকা।-১২০৯ মুঠোফোন :- +৮৮০১৭১২৪১৫৮৫৩,+৮৮০১৫৮০৮২০৬৬৩,+৮৮০১৭১২০৬১১৬৩
E-mail :- newszhor@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত. বাংলাদেশ হোস্টিং