স্টাফ রিপোর্টার।। আশরাফুল আলম এমু। উপজেলা কৃষক লীগের ও সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এই পরিচয় ও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে উপজেলায় একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। একের পর এক অনিয়মে জড়ালেও কেউ মুখ খুলতে নারাজ। নিজস্ব গুণ্ডা বাহিনী গড়ে তোলায় এলাকায় কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চাননা। এর আগে তার ঠিকাদারি কাজে অনিয়ম এবং জুয়ার আসর থেকে কৃষকলীগ সদস্যের গ্রেপ্তারের সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের মারধরের নির্দেশ দেন। সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিককে ঝুলিয়ে পেটার হুমকি পর্যন্ত দেন প্রকাশ্যে। এক কথায় উপজেলায় ত্রাসের রাজস্ব কায়েম করেছেন এই নেতা। দলীয় প্রভাবের কারণেই পার পেয়ে যাচ্ছেন তিনি। সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা গণমাধ্যমকর্মীরাও তার বিরুদ্ধে কোন খবর লিখতে সাহস পাচ্ছেন না। উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এমুর এমন কর্মকান্ডে দল ও সরকারের ভাবমূতি বিনষ্ট হচ্ছে। এর আগে ২০১০ সালেও এমুর বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জমি দখলের অভিযোগ ছিল। এ নিয়ে মামলা হলে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায়। তখন ছিল ছাত্রলীগের নেতা।
সম্প্রতি সাত বিঘা জমিতে থাকা দেড় হাজার কলাগাছ কেটে ট্রাক্টর দিয়ে হালচাষ করে অন্যের নয় বিঘা জমি দখল করার অভিযোগ উঠেছে ওই আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। এমন একটি খবর ভয়ে বা অন্যকোন কারণে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা প্রকাশ করেনি বা করতে সাহস পায়নি। ভুক্তভোগী উক্ত আওয়ামী লীগে নেতাসহ ছয় জনের নাম উল্লেখ করে দেবীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেন। কিন্তু পুলিশ অভিযোগটি আমলে নেয়নি। ভয় আর আতঙ্কে বাধ্য হয়ে বিষয়টি আপোষ করে নিয়েছেন মামলার বাদী।
লিখিত অভিযোগ ও সরজমিন অনুন্ধানে জানা গেছে, সদর ইউনিয়নের খয়ার বাগান তিস্তাপাড়া এলাকার মোফাসেল হক একই এলাকার ফজল হক, সাহেব আলী ও সলেমান আলীর নিকট থেকে দুই বছরের জন্য ১০ বিঘা জমি ইজারা নেন মোফাসেল হক মোখা। এরমধ্যে ৭ বিঘা জমিতে কলা ও ২ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেন এবং এক বিঘা জমিতে আলু চাষের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। গত ১৩ অক্টোবর বিকাল ৫ টার দিকে কৃষকলীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম এমু নিজে উপস্থিত থেকে ১০-১১ জন ব্যক্তিকে দিয়ে প্রায় দেড় হাজার কলা গাছ কেটে ফেলেন। সেই সাথে দুটি ট্রাক্টর দিয়ে প্রায় ৪ বিঘা জমিতে হাল চাষ দেন। এতে মোফাসেল হক প্রায় ৯ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। এই সময় মজনু ইসলামের কাছে থাকা মোফাসেল হকের স্মার্টফোনে এই ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে গেলে সেই ফোনটিও চেয়ারম্যান কেড়ে নিয়ে ভেঙ্গে ফেলেন। পরে চেয়ারম্যানের লোকজন মোফাসেল হক ও মজনু ইসলামকে ধাওয়া দিলে তারা প্রাণ বাঁচাতে সেখান থেকে চলে যান।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, জমির মালিকগণ বগুড়ায় থাকেন। গত বছর জমি সংক্রান্ত সমস্যার কারণে এলাকায় এসে চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সেই সমস্যার সমাধান করেন তারা। এর জন্য চেয়ারম্যানকে ৬০ হাজার টাকাও প্রদান করেন। এই বছর নতুন করে লিজের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য মোফাসেল হক সরাসরি জমির মালিকদের লিজের টাকা প্রদান করেন। চেয়ারম্যানকে না জানিয়ে কেন লিজের টাকা দেওয়া হয়েছে সেই জন্য তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে জমি দখল করেন।
মোফাসেল হক বলেন, চেয়ারম্যানের মাধ্যমে টাকা দিলে সেই টাকা জমির মালিকরা পেতেন না। আর আমিই বা কেন লিজের টাকার বিষয়ে চেয়ারম্যানকে বলতে যাব। থানায় অভিযোগ দায়েরের পর থেকে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। চেয়ারম্যানের লোকজন আমাকে রাস্তায় বের হলেই হুমকি দিচ্ছে। আমার ক্ষেতে যেতে দিচ্ছে না। সার কীটনাশক ও পানি সেচ দিতে না পারায় বাদাম ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে বিষয়টি আমি আপোষ করে নিয়েছি। উনি এর বেশি কিছু বলতে চাননি।
কৃষকলীগ নেতা ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম এমু বলেন, ‘‘বিষয়টি আপোষ হয়ে গেছে। কাজেই এ নিয়ে আর কিছু বলতে চাই না। আমার বিরোধী পক্ষরা আমার বিরুদ্ধে নানা সময়ে নানা মিথ্যা অভিযোগ করছেন।আমি শুধু আওয়ামী লীগ, কৃষকলীগ নেতাই না একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিও। আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ তিনি মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবি করেন। ’’
দেবীগঞ্জ থানার ওসি সরকার ইফতেখারুল মোকাদ্দেম এমন একটি অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দুই দিন পরে এক ইউপি সদস্যকে সাথে নিয়ে এসে তিনি বলে গেছেন বিষয়টি আপোষ করে নিয়েছেন।