1. info@www.dailyzhornews.com : দৈনিক ঝড় :
শনিবার, ০৩ মে ২০২৫, ০৮:২৩ অপরাহ্ন

পঞ্চগড়ের তালমা নদীতে অবৈধ পাথর উত্তোলন নদী ভাঙ্গনে বিলিন হচ্ছে চা বাগান ফসলি জমি

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৩
  • ১৫৯ বার পড়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার।। পঞ্চগড়ের প্রধানতম তালমা নদীতে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করছে দুর্বৃত্তরা। প্রতিদিনই ১০ থেকে ১২ জনের দল বেঁধে প্রায় ১০ থেকে ১২টি দল পানি প্রবাহের গতিরোধ করে লাখ লাখ টাকার পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন করছেন। নদীর প্রায় ৪০ ফিট নিচ থেকে গর্ত করে পাথর উত্তোলন করায় নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গনে নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে চা বাগান ফসলি জমি। হুমকির মুখে রয়েছে চা বাগান, সুপারি বাগান, কবরস্থানসহ গাছপালা। নদী পাড়ের জমির মালিকদের বাধা দেওয়া সত্বেও থামেনি পাথর উত্তোলন।

সরেজমিনে সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের জিয়াবাড়ি এলাকায় তালমা নদীতে গিয়ে দেখা যায় এক দিকে ইজারাদারের লোকজন বালু তুলছেন। অপরদিকে স্থানীয় কিছু দুর্র্বৃত্ত নদী থেকে লোহার তৈরি ছেনি (জাকলা) দিয়ে পানির নিচ থেকে বালু তুলে গর্ত করছেন। এভাবে গর্তের ভিতর পাথর দেখা দিলেই বালু তোলা বন্ধ হয়। তখন আবার দুইজন পানির নিচ থেকে শক্ত নেট দিয়ে পাথর তুলে পানির উপরে নিয়ে আসেন। এভাবেই দলে দলে বিভক্ত হয়ে দশ থেকে ১২টি দল পাথর উত্তোলন করছে। এদিকে গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ করে কয়েকজন দুর্বৃত্ত পালিয়ে যায়। কিছু পাথর উত্তোলনকারী ঘাটে চলে আসেন। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হলে প্রথমে নদীর বালু মহালের ইজারাদারের নির্দেশে পাথর তুলছেন বলে জানান তারা। পরে ইজারাদার অস্বীকার করলে জিয়াবাড়ি এলাকার আছিদুল ইসলাম, তজমল হক বলেন, কোন কাজ পাইনা তাই গেল কয়েকদিন ধরে পাথর উত্তোলন করছি সেই সাথে ভুল হয়েছে বলেও জানান তারা।
পাথর উত্তোলনকারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তালমা বাজারের পরিবহন শ্রমিক নেতা জুয়েল ও স্থানীয় প্রভাবশালী হারেছ এসব পাথর উত্তোলনকারীদের সহযোগিতা করেন। তবে তারা দুজনেই বিষয়টি অস্বীকার করেন। জুয়েল মুঠোফোনে জানান, ‘আমি তালমা নদীর বিভিন্ন দলের কাছ থেকে ট্রাক্টর প্রতি সাড়ে নয় হাজার টাকা করে পাথর ক্রয় করি। আমার মত অনেকেই তালমা নদীর পাথর প্রতিদিন দলগুলোর কাছ থেকে কিনে নেন।’
এদিকে হারেছ আলীর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কোন পাথর ব্যবসার সাথে জড়িত নই।’
জিয়াাবাড়ি এলাকার মো. ফারুক জানান, আমাদের চার বিঘা পারিবারিক কবরস্থান এখন নদী ভাঙ্গনের হুমকির মুখে কারন পাথর উত্তোলনের কারনে বর্ষা এলেই নদী ভাঙ্গন শুরু হয়। তাছাড়া পাথর পরিবহনের ট্রাক্টর থেকে পানি পড়ার কারনে আমাদের সড়কের বেহাল অবস্থা ।
স্থানীয় চা বাগান মালিক হারুন জানান, ‘পাথর উত্তোলনের কারণে নদী ভাঙ্গনে আমাদের এক একর চা বাগান নদীগর্ভে চলে গেছে। আমরা বার বার পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে বলেছি কিন্তু তারা আমাদের কথা শুনেনি। অথচ পাথর উত্তোলনের জন্য কোন অনুমোদন দেয়নি সরকার।’
আরেক চা বাগান মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, ‘শুধুমাত্র পাথর উত্তোলনের কারনেই বাঁশ সহ এক বিঘা জমি নদীতে বিলিন হয়েছে। এভাবে জিয়াবাড়ি এলাকায় পাথর উত্তোলন বন্ধ না হলে বীরমুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর পারিবারিক কবরস্থান, সুপারির বাগান সহ নানা ফসলী জমি নদীগর্ভে চলে যাবে। অতি দ্রুত পাথর উত্তোলন বন্ধ করার দাবী জানান তিনি।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, ‘তালমা নদীতে পাথর উত্তোলনের খবর পেয়েছি। জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন সভায় পাথর উত্তোলন এবং নদী ভাঙ্গনের কথা উঠে এসেছে। নদী ভাঙ্গনের বিষয়টি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সাথে অবৈধ পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস  দিয়েছেন তিনি।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: বাংলাদেশ হোস্টিং