1. info@www.dailyzhornews.com : দৈনিক ঝড় :
মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ০১:৩৭ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
২৫ মার্চ কালো রাতকে হার মানিয়েছে শাপলা গণহত্যা – রাশেদ প্রধান পঞ্চগড় সদর উপজেলা বিএনপির সম্মেলন সভাপতি দাউদ, সাধারণ সম্পাদক বাবু এ মেলায় সকলের সম্পৃক্ততা নেই- এটা মনে হচ্ছে বিএনপি’র মেলা – রাণীশংকৈলে মির্জা ফয়সাল মনুষ্যত্বের মানবতা // সিরাজুল রিক্সাচালক গোবিন্দগঞ্জে ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক নারীর মৃত্যু তসিবার গানে মডেল প্রিয়া অনন্যা ও মুন্না খান যে মাঠে ১৪৪ ধারা জারি সে মাঠে বৈশাখী মেলার বাড়ী বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালন করেছে বিজিজেএ কেন্দ্রীয় কমিটি ভবিষ্যতের বাংলাদেশ ফ্যাসিস্টের জন্য আর কোন জায়গা দেবে না -ব্যারিস্টার নওশাদ জমির বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে প্রত্যাশা

এনলাইটেনমেন্ট যেন গণপ্রতারণা

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: রবিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৩
  • ১০১ বার পড়া হয়েছে

।।  আশিক রাহিম ।। 

রেনেসাঁর মাধ্যমে ইউরোপীয়রা নতুন করে জেগে উঠে যা সূচিত হয় প্রাচীন গ্রিসের শিল্প, সাহিত্য ও দর্শন পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে। ১৫ শতাব্দীতে মুদ্রণ যন্ত্রের আবিস্কার সুগম করে দিয়েছিল নতুন নতুন ধ্যান ধারণা দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে। ক্যাথলিক চার্জ থেকে বেরিয়ে এসে তৈরি হয় নতুন নতুন সংস্কারবাদী ধর্মীয় সম্প্রদায়। তারপর আবার ১৮ শতাব্দীর শেষের দিকে এসে সংগঠিত হয় দুটি বড় ধরনের বিপ্লব। একটি হল ফরাসী বিপ্লব আরেকটি আমেরিকান বিপ্লব, যেগুলো সেখানকার রাজতন্ত্রের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল। ততো দিনে শিল্প বিপ্লবও ছড়িয়ে পড়ে গোটা ইউরোপে। আর এই ১৮শ শতাব্দীতেই ঘটে যায় আরেক বিপ্লব, যা আমাদের কাছে আলোকময়তা বা এনলাইটেন্টমেন্ট। কারোর মতে এই সময়টাতেই জ্ঞানের আলোক পর্বের যাত্রা শুরু এবং এই বিপ্লবের ফলেই বর্বর মধ্যযুগীয় সমাজকে ধ্বংস করে সূচিত হয় নতুন সমাজ দর্শন, যার ফলে যুক্তি ও মুক্তিবুদ্ধির উপরই প্রতিষ্ঠিত হবে রাষ্ট্র। মনে করা হয় যে সকল সমাজ যুক্তি ও বিজ্ঞানের উচ্চস্তরে পৌঁছাতে পারে না, সেগুলো আবদ্ধ আছে সভ্যতার প্রাথমিক স্তরে। ভারতের সমাজ গবেষক সেমন্তী ঘোষ তার এক রচনায় এই বিষয়ে লিখতে গিয়ে বলেন, আলোক পর্বের দর্শন সভ্যতার গুণগত বিচারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত রেখেছে বোধ। ইউরোপের যে অতীতকে সমূলে সরিয়ে দেওয়ার ব্রত নিয়ে আলোক পর্বের সূচনা হয়েছিল একদিন, সে অতীত ছিল অন্ধকার; বর্বর মধ্যযুগীয় ধর্মান্ধতা। সময়ের পালাক্রমে ইউরোপ এই অতীতের অবসান ঘটিয়েছে, কিন্তু অন্য নানান অঞ্চলে সে অতীত এখনো বর্তমান। সমাজ, ব্যক্তি, রাষ্ট্র, অর্থনীতি, রাজনীতি, প্রসাশন, শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের সাধারণ মানুষদের কতোটা আলোর পথ দেখিয়েছে? শুধু পোশাকে প্রগতিশীলতার পারফিউম মাখলেই জ্ঞানের আলোকে পথযাত্রী হওয়া যায় না। এনলাইটেনমেন্ট এবং আধুনিকতা একটি বুর্জোয়া মতাদর্শ- অনেক সময় প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মীরা এই সত্য উপলব্ধিতে ভুল করেন, এটা দুঃখজনক। আর এনলাইটেনমেন্টের মূল লক্ষ্য ছিল ধর্মের বিরুদ্ধে যুক্তি সংগ্রহ। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে পিছিয়ে পড়া সভ্যতার উন্নতি ঘটাবে এমন মানবিক আবদার ছিল এর অন্তর্মূলে প্রোথিত। এখন সেমন্তি ঘোষের সাথে একমত পোষণ করে বলাই যায় যে, আজকে এনলাইটেনমেন্টের সাথে ধর্মের তেমন কোনো সাংঘর্ষিক বিরোধিতা বা সম্পৃক্ততা নেই, যদি থেকে থাকে তাহলে সেটা অতীতে ছিল। তবে আমরা যে এনলাইটেনমেন্টকে কল্পনা করি সেই এনলাইটেনমেন্ট সংকটে পড়েছে আজকের রাজনৈতিক ও সামাজিক বৈরিতা, বর্ণবৈষম্যনীতি, অর্থনৈতিক শোষণ নিপীড়ন ও বুর্জোয়া মতাদর্শের কারণে। ধর্ম বলতে তো কেবল ঈশ্বরকেন্দ্রিক বিশ্বাসকেই ধরে নেওয়া যায় না। ধর্মীয় অন্ধত্ব, আবেগ, বিশ্বাস আধুনিক যুগে অনেকটাই দূর্বল এবং অস্তিত্ব রক্ষায় একরকমের যুদ্ধরত অবস্থায় অবস্থান করছে। খ্রিস্টধর্মাম্বলি হয়ে সোভিয়েত-রাশিয়ার সাথে ইউরোপ আমেরিকার কেন এতো দ্বন্দ্ব? আবার ইসলামের দুই পরাশক্তি সৌদি আরব ও ইরানের নিরব যুদ্ধের রসানলে ইমেয়েন কেন ধ্বংস্তুপে পরিণত ইচ্ছে? এই চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা কি ধর্মান্ধতার লক্ষণ নাকি আধুনিকতার একটা অংশ? আধুনিকতার কাছে পঞ্চমুখী চিন্তা পরিত্যাগ করা অনিবার্য। এতে নাকি সভ্যতা আটকে যায়। অথচ সভ্যতার সবচেয়ে বড় অর্থ তো সামাজিক উৎকর্ষ ও জ্ঞানার্জন আর ব্যক্তি ও শ্রেণি শোষণ থেকে মুক্তির লড়াইও। এই এনলাইটেনমেন্টের প্রথম সমালোচনা শুরু হয় ১৮ শতাব্দীতেই প্রথমে, নিটসের অনুসারি ম্যাক্স ওয়েবার শুরু করেন। ম্যাক্স ওয়েবার এই এনলাইটেনমেন্টকে বলেছিলেন “আয়রন কেইজ অব ফিউচার, ভবিষ্যতের যুক্তি শাসিত লোহার খাঁচা। কৌতূহলউদ্দীপক হচ্ছে পুঁজিবাদী সমাজের চিন্তা কাঠামোকে “লোহার খাঁচা”বলে যেই সমালোচনা করা হয়েছে সেই অভিধাটিকেই পাল্টে পুজিবাদ সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর বিরুদ্ধে তার মতাদর্শিক সংগ্রাম চালিয়েছে। পুজিবাদ, সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোকে বলেছে “লৌহ যবনিকার অন্তরালের সমাজ’। তারপরে আরও অনেকেই দেখাতে চান যে এই এনলাইটেনমেন্ট কি করে প্রকৃতির উপর মানুষের, শেষে মানুষের উপর মানুষের আধিপত্য তৈরি করে। এনলাইটেনমেন্টও একপ্রকার ফ্যাসিবাদ! কিন্তু কিভাবে? ফ্যাসিবাদ হচ্ছে বুর্জোয়া ধনতান্ত্রিক সমাজের যান্ত্রিক যুক্তিবাদের সর্বোচ্চ রূপ। এইভাবে এনলাইটেনমেন্ট প্রকল্প সম্পূর্ণ বিপরীতে চলে গিয়ে এক ধরণের বর্ববরতায় রূপান্তরিত হয়। তার প্রমাণস্বরূপ দেখানো যায় ১৯২২ সালে মুসোলিনির হাত ধরে ফ্যাসিবাদের উদ্ভব হওয়া তারপর হিটলারের নাৎসি বাহিনীর ইহুদি দমন। এইসব বর্বরতা কিন্তু এনলাইটেনমেন্ট যুগেই হয়েছে। হর্কহাইমারের ভাষায় ইউরোপে এনলাইটেনমেন্টের হাত ধরে শুধু আধুনিকতাই আসে নি, ফ্যাসিবাদও এসেছে। আজকের আধুনিকতা কিংবা এনলাইটেনমেন্ট মানব সমাজের সেই উৎকর্ষতার অর্জনকে কতোটা নিশ্চিত করে? বরং ধর্মান্ধতা অশিক্ষিত জনসাধারণের চাইতেও শিক্ষিত শ্রেণি ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে বেশি ক্রিয়াশীল। মজার ব্যপার দেখুন, বারাক ওবামা নিজেকে প্রগতিশীল বলে দাবি করে আসছেন এবং এখনো তা দাবি করেন। অথচ আরব বসন্তের নামে সে লিবিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষকে দূর্ভোগে ফেলেছে, বাস্তুহারা করেছে হাজার-হাজার মানুষকে এবং তার এই তেল শোষণের রাজনীতির শিকার হয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে অসংখ্য মানুষকে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সারা দিন যা কিছুই করেন বা বলেন সবকিছুতে যুক্তি থাকে না। থাকে শুধু আমিই একক, আমিই সত্য, আমিই শ্রেষ্ঠ ও সভ্যআধুনিক। এই প্রবণতা ভারতের প্রেসিডেন্ট মোদির মাঝেও আছে। ইউরোপের সাদা বর্ণই শ্রেষ্ঠ আর ভারতের হিন্দুত্ববাদ। চায়নাতে পূরনো ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ, পাকিস্তানের সামরিক শ্রেষ্ঠতা। এখন প্রশ্ন জাগে যে, সাধারণ মানুষের জন্য কোনো এনলাইটেনমেন্টের সুযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে কি? বর্তমান বিশ্বের বর্ণবৈষম্যনীতি, অর্থনৈতিক শোষণ, এবং যুদ্ধ সংস্কৃতি ও একনায়কতন্ত্র মনোভাব এর কোনটি একবিংশ শতাব্দীর এনলাইটেনমেন্টের কোন যুক্তি ও বিজ্ঞানকে কাছে টানে? বর্তমানে ছোট বড় দেশ ও সমাজ এনলাইটেনমেন্ট দর্শনচিন্তাটি সামাজিক রাজনীতি ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে এর পুরোপুরি সুবিধা বা দখল এলিট শ্রেণির ধারা নিয়ন্ত্রিত। ১৮শ শতকের এনলাইটেনমেন্ট হয় যদিও ধর্ম ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে যুক্তি ও বিজ্ঞানের সন্ধানে বা অন্ধকার থেকে মানব সভ্যতাকে মুক্ত করার যুক্তি ও প্রচেষ্টায়, আর আজকের বা আগামীর এনলাইটেনমেন্ট কি তাহলে রাজনৈতিক, সামাজিক বৈরিতা, বর্ণবৈষম্যনীতি, অর্থনৈতিক শোষণ, এবং যুদ্ধ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে নতুন সমাজদর্শন প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই? সারা পৃথিবীজুড়ে এখনো কোথাও না কোথাও একনায়কতন্ত্র, সৈরশ্বাসন, ব্যক্তিক্ষমতা, ধর্মীয় গুড়ামী চলছে। অথবা এইভাবেও বলা যায় যে যারা এই এনলাইটেনমেন্টের মানদণ্ডে আধুনিক বলে সার্টিফিকেট পায় না, তারা হয় অসভ্য, বর্বর ও পশ্চাৎপদ। এই আধুনিকতার চাপে সভ্যতার তলায় থাকা মানুষ, সমাজ ও সংস্কৃতির সৃষ্টিশীল ক্ষমতা সম্পর্কে আধুনিক পৃথিবীর একগুঁয়েমিতা এনলাইটেনমেন্টের আরেক উপজাত। তার মানে হিটলারের গ্যাস চেম্বারে ইহুদীদের পুড়িয়ে মারাও এনলাইটেনমেন্টের অবদান। আজকের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধও এনলাইটেনমেন্টের অবদান। আর আজকে অ্যামেরিকানরা যেটাকে বলেন “আমেরিক্যান ওয়ে অব লাইফ”সেটাও কিন্তু এনলাইটেনমেন্ট। এই এনলাইটেনমেন্টের গভীর অসুখ দুই দুইটা বিশ্বযুদ্ধ। প্রথমটার চেয়ে দ্বিতীয়টা আরো বেশি ধ্বংসাত্মক। যে ইউরোপে এনলাইটেনমেন্ট এলো এবং মানুষ যেখানে এক নতুন মুক্তির চিন্তার দেখা পেলো সেখানেই উদ্ভব হলো নির্মম ফ্যাসিবাদের। ষাট লক্ষ ইহুদিকে গ্যাস চেম্বারে পুড়িয়ে মারা হলো জাতিগত শুদ্ধতার নামে। তৈরি হলো পারমাণবিক বোমা। হিরোসীমা আর নাগাসাকি চোখের পলকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। এইসব ধ্বংসলীলা দেখে মানুষ বুঝতে পারল যে আধুনিকতা তাকে বিপুল প্রগতি দিয়েছে এবং সেটা তাকে একেবারে নিশ্চিহ্নও করে দিতে পারে।। যে ইউরোপে এনলাইটেনমেন্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সে ইউরোপে অতীতের বাস্তবতাতে বর্তমানে অন্ধকারই দেখি বেশি। যুদ্ধ, বর্ণবাদ, ধর্মকেন্দ্রিক বৈষম্যমুলক আচরণ বৈশ্বিকভাবে তারা’ই সবচেয়ে বেশি বহন করছে। ভিয়েতনাম যুদ্ধ, ইরাক যুদ্ধ, আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান, যতো শোষণ ও নিপীড়ন হয়েছে সবকিছুর মূলে আলোকিত পশ্চিমা বিশ্বই দায়ী এমন কি রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের জন্যে তারা’ই দায়ী। এখনো তারা আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশকে কলোনিজম পদ্ধতিতে শোষণ করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক যতো অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে তার পিছনে তারা অর্থাৎ আলোকময় সভ্যতা কলকব্জা নাড়ছে। আমি আমার দু’নয়নে এনলাইটেনমেন্ট বা আলোকিত যুগ কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। গত শতাব্দীতে আমাদের বদলানোটা খুব দ্রুত হয়েছিল। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ব্যবসা, রাজনীতি ও অর্থনীতে আমরা মোটা দাগে চোখে পড়ার মতো উন্নতি করেছি। শিল্প, সাহিত্যে, মননে মগজে আমাদের যে আমূল পরিবর্তন হয়েছে, সে তুলনায় আমরা আমাদের মনের জগতে কতটা উন্নয়ন করেছি? নাগরিক স্বার্থের অমিল, বর্ণের অমিল, ধর্মের অমিল এই পরিস্থিতিতে আমার দৃষ্টিকোণ থেকে এনলাইটেনমেন্ট দৃষ্টিহারা, গতিহারা ও বাঁকহারা। মুক্তচিন্তা এনলাইটেনমেন্ট মতাদর্শ এখন শ্রেণীস্বার্থেই ব্যবহৃত হচ্ছে বেশি। আমরা এখন ডায়োজিনিসের মতো ভরদুপুরে লণ্ঠন হাতে এনলাইটেনমেন্ট খুঁজছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: বাংলাদেশ হোস্টিং