1. info@www.dailyzhornews.com : দৈনিক ঝড় :
বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
উত্তর বঠিনায় শিক্ষার নামে প্রতারণা: ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি-অনিয়মে নাকাল বিদ্যালয়! সাবেক যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেনের অভিযোগ: রাজনীতিতে অবদানের পরও বঞ্চনার শিকার! বাংলাদেশ প্রেসক্লাব পলাশবাড়ি উপজেলা শাখা কার্যালয়ের উদ্বোধন ও দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন নলছিটিতে জনতার হাতে ডাকাত সদস্য আটক সাদুল্লাপুরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুর্ধর্ষ ডাকাতি!! থানায় মামলা করলে প্রাননাশের হুমকি প্রদান পীরগঞ্জে আপন মামা’র বিরুদ্ধে মামলা করে নিরাপত্তাহীনতায় ভাগিনার পরিবার পলাশবাড়ীতে বাসের ধাক্কায় আহত শিক্ষকের মৃত্যু আওয়ামী মিডিয়া ডনদের গ্রেফতার করতে হবে- রাশেদ প্রধান নৌকার সময় নৌকা ধানের সময় ধান পঞ্চগড়ে জেলা তথ্য অফিসের উদ্যোগে উদ্বুদ্ধকরণ সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন

ঠাকুরগাঁওয়ের সুজন ইংরেজিতে ভ্লগ বানান

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: শনিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ২১৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক।। ফসলি জমিতে কাজ করছেন এক তরুণ সুজন পাহান। কখনো পাওয়ার টিলার চালাচ্ছেন, কখনো ফসল নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। এসবের ফাঁকে অনর্গল কথা বলছেন ইংরেজিতে। উচ্চারণও বেশ চমৎকার, শুনে চমকে যেতে হয়। তাইতো সুজনের ভিডিও দেখেন লাখো মানুষ। ফসলি জমিতে কাজ করতে করতেই অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলে ভিডিও বানান সুজন। গ্রামের স্কুলে পড়া সুজন নিজ উদ্যোগেই শিখেছেন ইংরেজিতে কথা বলা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া বাসিন্দা সুজন কখনো নামী-দামী স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েননি। ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়ার কশালগাঁও গ্রামের আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায়ের পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারে বেড়ে ওঠা তার। দুই বছর বয়সে বাবা বগা পাহান মারা যান। এরপর থেকেই চলছে তার জীবন সংগ্রাম। মায়ের স্বপ্ন আকড়ে ধরে সুজন মাঠে কাজ করে হলেও নিজের পড়াশোনা অব্যাহত রেখেছে। সুজনের সহপাঠীরা শিক্ষাজীবন থেকে অকালে ঝড়ে পড়লেও সুজন নিজের চেষ্টায় পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ২০১৭ সালে রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি পাস করেন বর্তমানে রুহিয়া ডিগ্রি কলেজ তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়ন করছেন।
ছোট থেকে মাঠে কাজ করে সন্তানকে একা হাতে সামলেছেন সুজনের মা দুলালি পাহান। খুব বেশিদিন কাজ করতে পারেননি তিনিও। অসুস্থতাজনিত কারণে কাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে হয়েছে সুজন যখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।
সেই থেকে প্রতিদিন কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে সুজনের জীবিকার যুদ্ধ শুরু হয়। ঘরে অসুস্থ বৃদ্ধা মা ও ঘরের কাজ সামলে সুজন মাঠে চলে যান কামলার কাজে। কিন্তু মায়ের চোখে লালিত স্বপ্ন, অভাবের সঙ্গে লড়াই করে বড় হয়ে ওঠা একমাত্র মেধাবী ছেলে একদিন অনেক বড় চাকরি করবে।
অন্যের জমিতে আশ্রিতা হয়ে ছোট্ট এক কুড়ে ঘরে থেকে সুজন স্বপ্ন দেখেন নিজের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করে কিভাবে সমাজের পিছিয়ে পড়া শিশুদের সামনে এগিয়ে নেওয়া যায়। তাদের কাছে নিজেকে অনুপ্রেরণা করে গড়ে তোলা যায়।
সুজন পাহান ঢ দৈনিক ঝড়  কে   বলেন স্মার্ট ও টেকনোলজির যুগে ভালো কিছু করতে গেলে বাংলা ভাষার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজী শেখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনটনের সংসারে যেখানে পাঠ্যবইয়ে পড়ার সময় নেই সেখানে ভালো ইংরেজী শিখতে চাওয়াটা নিজের কাছেও কখনো কখনো অপ্রাসঙ্গিক লেগেছে। তবে ইংরেজীতে কথা বলার প্রবল আগ্রহ ও ইচ্ছাশক্তির কাছে অসম্ভব বলে কিছু নেই। আমি নিজের ভেতর সম্ভাবনা দেখছি। ফেসবুকে ইংরেজীতে কথা বলার ভিডিও দেখেই ইংরেজী রপ্ত করার চেষ্টা করেছি এবং নিজের ইংরেজী চর্চার ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করছি। তবে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ইংরেজী কোর্স করার সুযোগ সৃষ্টি হয়নি জীবনে।
তিনি আরও বলেন, সারাদিন ইংরেজীতে কথা বলার চেষ্টা করি। মানুষ হাসি ঠাট্টা করে। অনেকেই ভাবে আমার বুঝি মাথায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। কিন্তু আমি এসব তোয়াক্কা করি না। মাঠের ফসলের সঙ্গে কাজের সময়, গৃহস্থালির কাজে ও গবাদি পালনের সময় সবখানে ইংরেজীতে কথা বলার চর্চা করি। ইংরেজী চর্চা আমাকে অনুপ্রাণিত করে এবং স্বপ্ন দেখায়। নিশ্চয় একদিন ভালো কিছু হবে।
তবে আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ইংরেজী শেখার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। মাঠে কাজ করে যা আয় হয় তা নিত্যদিনের খরচ আর জীবন যাপনে চলে যায়। আমার একটি ছোট চাকরি হলেও স্বপ্ন পূরণের একধাপ এগোতে পারতাম।
সুজনের মা দুলালি পাহান বলেন, আমার ছেলে অনেক মেধাবী। অনেক কষ্টে তাকে বড় করেছি। যদি নিজে কাজ করতে পারতাম তাহলে তাকে কখনোই সংসার সামলাতে এত চাপ নিতে হত না। ছেলেটার একটি চাকরি হলে খুব উপকৃত হতাম।
সুজন এই সমাজের পিছিয়ে পড়া শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে চায়। একদিন তার এই স্বপ্ন পূরণ হবে এমন প্রত্যাশা তার মা, গ্রামবাসী ও সহকর্মীদের।
রুহিয়া ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর বলেন, সুজন পাল আমাদের স্কুলের একজন ছাত্র। সে অনেক দরিদ্র। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সে কলেজে আসে। সে অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করছে। আমি যতটুকু জানি সে হচ্ছে একজন মেধাবী ছাত্র। তার লেখাপড়ার জন্য আমাদের কলেজ থেকে সুজন পাহানকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন বলেন, মেধাবী ও প্রতিভাবান যারা আছে তাদের জন্য সরকার সব সময় কাজ করছে। আমরা যারা সরকারের প্রতিনিধি আছি আমাদের কাজ সরকার বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেওয়া। তার কী বিষয়ে সহযোগিতা প্রয়োজন। সে অনুযায়ী তাকে সহযোগিতা করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত