।। কামরুল হাসান খোকন ।।
এ আসন বরাবর আওয়ামী লীগের জেতা আসন হিসেবে পরিচিত। ২০০১ সনে চার দলীয় জোটের শরীক খুনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল কাফি নির্বাচিত হন। ২০০১ সনের জাতীয় নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত জনাব আব্দুর রৌফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ -এও এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এ আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। (রৌফ চাচার নিজ আসন ছিল দিনাজপুর-২) সেবার আওয়ামী প্রার্থী রৌফ চাচাকে হারিয়ে দেয়ার জন্যে কাজ করেছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন দলের একটা বড় অংশ, সেবার জাতীয় পার্টির হয়ে লড়েছিলেন মনোরঞ্জন শীল গোপাল এমপি। প্রায় পঞ্চাশ হাজার ভোট পেয়েছিলেন তিনি। ঢাকা থেকে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দগণ এসে বেশ কয়েকদিন কাজ করেছিলেন গোপাল দাদার জন্যে। যদিও তাদের নিয়ে আসা হয়েছিলো বিরোধ মেটানোর জন্যে। স্থানীয় উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ, সাবেক এমপি আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি এ ত্রয়ী অশুভ জোটের কাছে হেরে গিয়েছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সংগঠক প্রয়াত জননেতা আব্দুর রৌফ চৌধুরী। (প্রয়াত রৌফ চাচা কে বহিরাগত প্রার্থী আখ্যা দিয়ে অশুভ চক্রটি আন্দোলন করছিলেন।)
২০০৫ সনে জামাতের এমপি মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল কাফি’র স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ হলে আসনটি শূন্য ঘোষিত হয়। উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী) হিসেবে বেছে নেন মনোরঞ্জন শীল গোপাল দাদা কে। এর কিছুদিন আগে থেকে জাগপা প্রধান পঞ্চগড় এর শফিউল আলম প্রধান ও গোপাল দাদা আওয়ামী লীগে যোগদানের চেষ্টা করে আসছিলেন। ( খালিদ ভাই, আমার সাথে যোগাযোগ রেখে চলতেন) মাননীয় নেত্রী প্রয়াত শফিউল আলম প্রধান এর বিষয়ে “না” জানিয়ে দেন। গোপাল দাদা কে ডেকে নেন। এবং তিনি আওয়ামী লীগে আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগ দেন, এরমধ্যে উপনির্বাচন এসে গেলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। ১৯৯১ সনে গোপাল দা জাগ পার থেকে এমপি পদে লড়েন। ভোট পান হাজার পাঁচেকের ও কম।
২০০৫ সনের উপনির্বাচন থেকে শুরু করে মনোরঞ্জন শীল গোপাল দাদা এখন অব্দি এমপি। আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে অন্য কাউকে বেছে নেয়নি। তার উপরেই আস্থা রেখেছেন।
মনোরঞ্জন শীল গোপাল দাদা ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ (জাগপা) দিনাজপুর জেলা শাকার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘকাল। জাগপা নেতা শফিউল আলম প্রধানের অন্যতম ভাবশিষ্য ছিলেন। পরে জাতীয় পার্টি ও
করেছেন কিছুকাল। শফিউল আলম প্রধান সহ।
তিনি ছাত্রজীবনে কট্টর আওয়ামী বিরোধী ছিলেন। ফ্রিডম পার্টি, যুব জোট, জাগপা মিলে যৌথভাবে ১৫ অগাস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মহান মুজিব, তার পরিবারবর্গ, স্বজন হারানোর জাতীয় শোকের দিনে দিনাজপুরে নাজাত দিবসও পালন করেছিলেন। সেসময় কিছুদিন বিদিশা এরশাদের জাতীয় পার্টিও করেছেন। বিদিশা এরশাদকে বীরগঞ্জে নিয়ে গিয়ে সভা পর্যন্ত করেছেন। তার অতীত রাজনৈতিক জীবন ছিল কদর্যময়। সুবিধাবাদী রাজনীতির অন্যতম নির্ণায়ক।
গোপাল দাদা নির্বাচনী এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাপন করেন। সংসদ অধিবেশন, কাজের জন্যে সচিবালয় বা বিভিন্ন অধিদপ্তরে ঢাকায় যান। দিনাজপুর ও নিজ নির্বাচনী এলাকায় বেশী থাকা হয় তার। অত্র অঞ্চলে সংসদ সদস্য গণের মধ্যে নিজ নির্বাচনী এলাকায় থাকার দিক থেকে তিনি শীর্ষে রয়েছেন নিশ্চিতভাবে বলা যায়। বলা নেই ,কওয়া নেই কিছুদিন দেখা না হওয়া গ্রামের কর্মী, সাধারণ মানুষটির উঠোনে হাজির গোপাল দাদা। ভালোমন্দ খোজখবর নিতে।
২৪ আগস্ট নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস। দিনাজপুরের কিশোরী ইয়াসমিনের হত্যার প্রতিবাদে এই দিবস পালিত হয়। ইয়াসমিন এখন নারী নির্যাতন প্রতিরোধে এক প্রতীক l। ১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট সে ঢাকা থেকে দিনাজপুরের দশমাইল এলাকায় নিজ বাড়িতে ফিরছিল। পথিমধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তাকে পুলিশ ভ্যানে করে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপর তিন পুলিশ সদস্য তাকে গণধর্ষণ করে এবং তারপর হত্যা করে। মনোরঞ্জন শীল গোপাল দাদা এ আন্দোলনে দিনাজপুরের সর্বজনশ্রদ্ধেয় নেতা প্রয়াত এম আব্দুর রহিম এমপি চাচার নেতৃত্বে সাহসী ভূমিকা রাখেন। প্রতিবাদ-প্রতিরোধে অংশ নেন। এ আন্দোলনই তাকে তখনকার তরুন প্রজন্মের কাছে বিশেষ খ্যাতি এনে দেয়।
টং এর দোকানে চা পান করেন নেতা-কর্মী-জনগন সমেত। কচিকাঁচা বাজার করেন নিজে। দামী পোশাকও আশাক পরতে দেখিনি কোনোদিন। নির্বাচনী এলাকার রোগীদের পেছনে সময় ও অর্থ ব্যয় করেন। বেশ। শ্যামলী, কল্যাণপুর, আসাদ গেটের পাশে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও গামী নাইট কোচের স্ট্যান্ড। নিজ এলাকার ফিরে যাওয়া যাত্রী-সাধারণের সাথে সময় দেন কোচ ছেড়ে যাবার পূর্ব সময়ে। উনাকে আমার কখনও এমপি বলে মনেই হয় না। মনে হয় পাশের বাসার লোকটা। এত সিম্পল।
নির্বাচনী এলাকার প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেন। বিখ্যাত কান্তজীর মন্দির তার নির্বাচনী এলাকাধীন .এ মন্দিরে বাংলাদেশের সর্বোৎকৃষ্ট টেরাকোটা শিল্পের নিদর্শন রয়েছে । এ মন্দির প্রাঙ্গণ জুড়ে ব্যপক কাজ করেছেন তিনি। পর্যটন জেলা হিসেবে খ্যাত দিনাজপুর জেলার মুল আকর্ষন এই মন্দির। পর্যটন মোটেল ও রয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর এর অধীনে গবেষনা কেন্দ্রও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মন্দিরের সংস্কার কাজ সাধিত হয়েছে। দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা ছুটে আসেন নিয়মিত।
নিজ নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলার পার্শ্ব অবস্থিত উপজেলাগুলোর সাথে সংযোগ সড়ক নির্মাণে উদ্যোগী হন এবং নির্মাণের কাজ বাস্তবায়ন করেন। নতুন স্কুল কলেজ নির্মাণ হয় অনেক ক’টি। নতুন অবকাঠামো হয় এসব স্কুল কলেজে।
মোদ্দা কথা, বসে ছিলেন না। কাজ করেছেন। প্রতিনিয়ত চষে বেরিয়েছেন নির্বাচনী এলাকার প্রান্তর।
কাহারোল উপজেলা সনাতন ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় এবং বীরগঞ্জ উপজেলায়ও কম নয় ভোটের সমীকরণে এটা তাকে বারংবার বাড়তি সুবিধা এনে দিয়েছে। অনস্বীকার্য।
দলীয় নেতা-কর্মী সাধারণ, কিছু কিছু প্রান্তিক এলাকায় দাদার বিষয়ে রয়েছে কতক অনুযোগ-অভিযোগ। মিথ্যে-সত্য যাচাইয়ে নেই, তবে আগামীতে এসব বিষয়ে দাদার সাবধানতা অবলম্বন আবশ্যক। অতি। বীরগঞ্জ কাহারোলে কতক জনবিচ্ছিন্ন নেতার অব্যহত ষড়যন্ত্র তার পিছু ছাড়ে না। বহুদ্দিন ধরে এটা চলছে। এখন জনবিচ্ছিন্ন নেতাগণ আবার ডিম ছেড়েছে।
দাদার জয় আসুক। জয় আসুক নৌকার।
জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।
প্রকাশক/সম্পাদক :- শাওন আমিন।। ব্যাবস্থাপনা সম্পাদক :- মোঃ গিয়াস উদ্দিন।। নির্বাহী সম্পাদক :- ঝড় আমীন।। প্রধান কার্যালয় :- হালিশহর, চট্রগ্রাম। মুঠোফোন :- +৮৮০১৭১২০৬১১৬৩ ঢাকা কার্যালয়:-বাসা নং ৫১/৩,ধানমন্ডি ৩/এ, ঢাকা।-১২০৯ মুঠোফোন :- +৮৮০১৭১২৪১৫৮৫৩,+৮৮০১৫৮০৮২০৬৬৩,+৮৮০১৭১২০৬১১৬৩
E-mail :- newszhor@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত. বাংলাদেশ হোস্টিং