স্টাফ রিপোর্টার।। দুই সপ্তাহ পর ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে উত্তরের হিমাঞ্চল উপজেলা তেঁতুলিয়া। কুয়াশার সাথে বইছে হিমেল হাওয়া। কুয়াশার কারণে আবার জনজীবনে নেমেছে স্থবিরতা। তবে সুর্যের আলো ছড়াতে শুরু করলে ধীরে ধীরে কুয়াশা কেটে যায়।
শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর তিন ঘন্টা আগে ভোর ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ১১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকালে আবহাওয়ার তথ্যটি জানিয়েছেন জেলার প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যানুযায়ী, গত দুদিন ধরেই তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি ঘরে অবস্থান করছে। গত ২৮ ডিসেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনদিন ১২ থেকে ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রির মধ্যে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে এ জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে।
বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, ভোর থেকেই ঘন কুয়াশার আবরণে দেশের এ প্রান্তিক জেলা। কুয়াশার কারণে এ সীমান্ত জনপদে আবার নেমে এসেছে স্থবিরতা। জীবিকার তাগিদে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো কাজে বের হলেও শহরের অধিকাংশ মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। তবে শীত উপেক্ষা করেই আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে ও নির্বাচনী সভা করতে ঘাম ঝরাচ্ছেন প্রার্থী ও তার সমর্থকরা।
স্থানীয়রা জানান, আজ হঠাৎ করে আবার ভোর থেকে ঘন কুয়াশা। দুই সপ্তাহ ধরে সকালে এরকম কুয়াশা দেখা যায়নি। তবে কনকনে শীতের তীব্রতা না থাকলেও হিমেল হাওয়ার কারণেই বেশ ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে।
ভ্যান চালকরা জানান, কয়েকদিন ঝকঝকে রোদের পর আবার কুয়াশা দেখা দিল এ অঞ্চলে। কুয়াশার কারণে ভ্যানে চরতে চান না অনেকেই। তারা অটোরিকশায় যান। এ কারণে কামাই কম হয় কুয়াশা থাকলে।
পাথর শ্রমিকরা জানান, যদিও বছরের শেষে এ সময়টা চা পাতার কাজ কমে গেছে। আজ হঠাৎ করে কুয়াশা পড়েছে। তবে কি আর করবো, কাজে বেরিয়েছি।
এদিকে শীতের কারণে বেড়েছে বিভিন্ন শীতজনিত রোগব্যাধি। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোতে আউটডোরে ঠান্ডাজনিত রোগী বাড়তে শুরু করেছে। চিকিৎসার পাশাপাশি শীতজনিত রোগ থেকে নিরাময় থাকতে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছেন চিকিৎসকরা।
জেলার প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, গতকাল শুক্রবারের থেকে কিছুটা তাপমাত্রা কমেছে। ঘন কুয়াশা রয়েছে। আজ শনিবার সকাল ৯টায় ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। শুক্রবার ১১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। গত ১৬ ডিসেম্বর থেকেই টানা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে পঞ্চগড়ে। এ জেলা হিমালয় বিধৌত এলাকায় অবস্থান হওয়ায় এখানে অন্যান্য এলাকা থেকে শীত আগে নামে। এ সময়টাতে তাপমাত্রা অনেক কম থাকে। আগামীতে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।
জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম জানান, ‘পঞ্চগড় শীতপ্রবণ জেলা। এখানে প্রায়দিনই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করে। শীত মোকাবেলায় জেলা-উপজেলা প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতি আছে। ইতিমধ্যে ২০ হাজার কম্বল পাওয়া গেছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকৃত গরিব, অসহায় ও শীতার্তদের মধ্যে এসব শীতবস্ত্র উপহার হিসেবে বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে শীতবস্ত্র চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই আরো শীতবস্ত্র পাওয়া যাবে। এছাড়া বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগেও শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। ’