স্টাফ রিপোর্টার।। ঘন কুয়াশা ও শিশির ঝরা হিমশীতল বাতাসে বেড়েছে শীতের পারদ। শীতের তীব্রতায় কাবু হয়ে পড়েছে উত্তরের হিমাঞ্চল জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া। বছরের শুরুতেই শীতের এমন ধাক্কায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এ সীমান্তবর্তী জনপদ। এতে করে শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি অবস্থানে এ জেলাটি।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারী) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর তিন ঘন্টা আগে ভোর ৬টায় ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। সোমবার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর তিন ঘন্টা আগে ভোর ৬টায় ১১ দশমিক ৭ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। সকালে আবহাওয়ার তথ্যটি জানিয়েছেন জেলার প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যানুযায়ী, নতুন বছরের প্রথম দিনেই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে এ জেলা। বিদায়ী বছর ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এ জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ২৩ দিন। তার মধ্যে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে ৬ দিন। ১১ থেকে ১২ ডিগ্রির মধ্যে ৬ দিন, ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রির মধ্যে ৬ দিন, ১৩ থেকে ১৪ ডিগ্রির মধ্যে ৪ দিন, ১৪ থেকে ১৫ ডিগ্রির মধ্যে ২ দিনসহ তার উপরেই তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে।
বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, ভোর থেকেই ঘন কুয়াশার আবরনে এ জেলা। কুয়াশার সাথে ঝরছে হিম শিশির। তার সাথে বইছে হিমেল হাওয়া। এতে করে কুয়াশা ঝরা ঠান্ডা বাতাসের কারণে নেমে এসেছে স্থবিরতা। সকালে বিভিন্ন যানবাহনগুলোকে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে দেখা গেছে। শহরের মানুষরা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হলেও জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করেই নিম্ন আয়ের মানুষগুলো বেরিয়েছেন কর্মসংস্থানে। কেউ যাচ্ছেন দিন মজুরি দিতে, কেউ পাথর তুলতে, কেউ চা বাগানে। তারা বলছেন, পেটের তাগিদেই শীতের দূর্ভোগ সহ্য করেই কাজে বেড়িয়েছেন।
এদিকে সন্ধ্যার পর তীব্র শীত বইলেও আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ও নির্বাচনী সভার মধ্য দিয়ে শীতে ঘাম ঝরাচ্ছেন প্রার্থী ও তার সমর্থকরা। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ঢাকা থাকছে সূর্যের মুখ। সূর্যের মুখ দেখা গেলেও সে রোদে মিলেনি উষ্ণতা।
স্থানীয়রা জানান, প্রচন্ড ঠান্ডা পড়েছে আবার। ভোর থেকেই ঘন কুয়াশায় ঢাকা আমাদের এ এলাকা। হিমশীতল হাওয়া ও কুয়াশায় ঠান্ডা লাগতেছে। গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত বৃষ্টির মতো শিশির ঝরেছে।
গ্রামীণ নারীরা জানান, বৃষ্টির মতো শিশির ঝরছে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত। ঘরে মেঝে, আসবাবপত্র, দরজা ও বিছানা পর্যন্ত ঠান্ডায় বরফ হয়ে উঠেছে। প্রচন্ড ঠান্ডা।সকালে কাজ করতে খুব কষ্টকর হয়ে উঠেছে।
ভ্যান চালকরা জানান, আবার ঘন কুয়াশা ভাই। কুয়াশার কারণে ভ্যান চালানো কষ্টকর হয়ে উঠেছে। রোদ উঠলে শীত থাকলেও আয় বাড়ে। কিন্তু ঘন কুয়াশা থাকলে কেউ সহজেই ভ্যানে চড়তে চান না। এ কারণে কামাই কম হয় কুয়াশা থাকলে।
চা শ্রমিকরা জানান,আজও প্রচন্ড ঠান্ডা। তার মধ্যে ঘন কুয়াশা। এ সময়টা চা পাতার কাজ কমে গেছে। দুদিন ধরে আবার কুয়াশা। তবে কি আর করবো, কাজে বেরিয়েছি। একই কথা বলেন পাথর শ্রমিকরা। তারাও জীবিকার তাগিদে কাজে বেড়িয়ে পড়েছেন।
সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা জামান চৌধুরী জানান, শীতের কারণে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, ক্রনিক শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ার মতো নানান শীতজনিত রোগ বেড়েছে। এসব রোগে বেশি আক্রান্ত হয়েছে শিশু বয়স্করা। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোতে আউটডোরে ঠান্ডাজনিত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসার পাশাপাশি শীতজনিত রোগ থেকে নিরাময় থাকতে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেছেন চিকিৎসকরা। বিশেষ করে পচা বাসি খাবার পরিহার ও উষ্ণতা বজায় রাখতে হবে।
জেলার প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, গতকালের চেয়ে তাপমাত্রা কমেছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। ভোর ৬টায় রেকর্ড হয়েছে ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল শনিবার রেকর্ড হয়েছিল ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সামনে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম জানান, ‘পঞ্চগড় শীবপ্রবণ জেলা। এখানে প্রায়দিনই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করে। শীত মোকাবেলায় জেলা-উপজেলা প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতি আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণায়ল থেকে প্রায় ২৬ হাজার কম্বল পাওয়া গেছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকৃত গরিব, অসহায় ও শীতার্তদের মধ্যে এসব শীতবস্ত্র উপহার হিসেবে এসব শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে শীতবস্ত্র চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই আরো শীতবস্ত্র পাওয়া যাবে। এছাড়া প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগেও শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। ’ #