শহীদুল ইসলাম শহীদ,পঞ্চগড়।।
তৃতীয় দফার শৈত্যপ্রবাহের পর শনিবার ১০ ডিগ্রির উপরে বেড়েছে তাপমাত্রা। তবে তাপমাত্রা বাড়লেও কমেনি শীতের অস্থির দাপট। জনজীবনে দূর্ভোগের সাথে কঠিন দারিদ্রতায় পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষরা। ভোর থেকে ঘন কুয়াশা থাকায় শীতের কারণে থমকে গেছে কাজ কর্ম। সময় মতো কাজে যেতে না পারায় আয়-রোজগারহীনতায় সংসার চলছে অভাব-অনটনের ভেতর। এমন দূর্ভোগে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটছে তাদের।
শনিবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ভোর ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল রেকর্ড হয়েছিল ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভোর থেকেই ঘন কুয়াশার আবরণে সীমান্ত জেলা। কুয়াশার সাথে ঝরছে হিমশীতল শিশির। শহর ও গ্রামের সড়কগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে যানবাহনগুলোকে। টানা শীতের কারণে চরম বিপাকে সময় পার করছে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা। নিম্ন আয়ের মানুষগুলো পরিবার-পরিজনের কথা ভেবে জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করেই কাজে বেরিয়েছেন। তারা বলছেন, লাগাতার শীতে বেসামাল পরিস্থিতিতে পড়েছেন। একদিকে কামাই রোজগার কম, আরেকদিকে বিভিন্ন শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। দৈনিক শ্রমে পূরণ হচ্ছে না বাজার ও ঔষুধ কিনতে গিয়ে।
শীতের কারণে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগ। প্রতিদিন জেলা আধুনিক সদর হাসপাতালে গড়ে ৩০০ রোগী ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তির খবর পাওয়া গেছে। সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা জামান চৌধুরী জানান, শীতের কারণে প্রচুর রোগী শীতজনিত রোগী আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন। ডায়রিয়া, হাপানি, শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগসহ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেক রোগী। এদের মধ্যে বেশির ভাগ শিশু। এজন্য শিশুদের ঠান্ডা থেকে দূরে রাখতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিহিস্টামিন ও অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো যাবে না। শ্বাসকষ্ট হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে।
এদিকে বিপাকে পড়েছেন চাষিরাও। চাষিরা জানাচ্ছেন, ঠান্ডার প্রকোপের কারণে খেতখামারে কাজ করতে পারছেন না। বীজতলা কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে। চরম বিপাকে পড়েছে আলু চাষিরা। তীব্র শীতের কারণে ক্ষেতের আলুতে ছত্রাকের আক্রমণ বেড়েছে। পাতা কুকড়ে যাচ্ছে। অতি মাত্রায় শীতের কারণে গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর্লি ব্লাইট দেখা দেয়ায় ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সমস্যা মোকাবেলা করতে গিয়ে ২-১ দিন অন্তর অন্তর ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে।
জেলার প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ জানান, আজ ১০ ডিগ্রির উপরে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। শনিবার সকাল ৯টায় ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন এ জনপদ। বেলা ১১টার সময় সূর্যের মুখ দেখা গেছে। উত্তর-পূর্ব বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হওয়ার কারণে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি এ জনপদের সব বয়সী মানুষজন শীতে দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, শীতপ্রবণ জেলা হিসেবে প্রতি বছর পঞ্চগড়ে সরকারি-বেসরকারিভাবে পর্যাপ্ত কম্বল বিতরণ করা হয়। এবারও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২৯ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। তবে এবারে শীতের শুরু নির্বাচনকালীন হওয়ায় পাঁচ উপজেলার ইউএনও এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ইতিমধ্যে প্রাপ্ত শীত বস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। তাছাড়া বেসরকারিভাবেও বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রত্যন্ত এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। সরকারিভাবে আরও কম্বলের চাহিদা রয়েছে। এজন্য আরও শীতবস্ত্র চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। নতুন করে কম্বল বা শীতবস্ত্র পাওয়া গেলে দ্রুত বিতরণের ব্যবস্থা করা হবে। #