পঞ্চগড় প্রতিনিধি।। এক বছরের ব্যবধানে পঞ্চগড় ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার কলিজিয়েট ইনস্টিটিউট (ডিগ্রি) কলেজের ৪ জন শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। যা নিয়ম বহির্ভূত ও নজিরবিহীন হলেও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের (গভর্নিং বডির) সভাপতি এ কাজটি করেছেন। তার ইচ্ছা অনিচ্ছার ওপর চলছে বিভিন্ন কার্যক্রম। গর্ভনিং বডির সভাপতির অনৈতিক দাবি না মানলেই কৌশলে সরিয়ে দেওয়া হয় তাদের। এতে শিক্ষক-কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের পাশাপাশি বিরূপ প্রভাব পড়াসহ হচ্ছে নানা আলোচনা সমালোচনা। ১৯৯২ সাল থেকে এ কলেজে দীর্ঘদিন থেকে পূর্ণাঙ্গ অধ্যক্ষ নেই। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে চালানো হচ্ছে। এ নিয়েও হচ্ছে নানা কথাবার্তা। এমপি মনোনীত কলেজটির পরিচালনা পর্ষদের (গভর্নিং বডির) সভাপতি ফজলে নূর বাচ্চুকে ম্যানেজ করে চলতে না পারাসহ আর্থিক ও বিভিন্ন কারণে ওই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষদের অব্যাহতি দেয়া হয় বলে জানা গেছে। কেউ কেউ তার কর্মকান্ডকে তুগলঘি ও যা ইচ্ছা তাই বলে অবিহিত করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী কাউকে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসালে তাকে ৬ মাসের আগে সরানো যাবেনা। সরাতে হলে অব্যাহতিপত্র নিতে হবে।
কলেজটিতে ১৯২২ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ২ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৬ মাসে চারজন অধ্যক্ষকে সরানো হয়। শুধুমাত্র সভাপতির অনৈতিক প্রস্তাব গ্রহণ না করায় এদের নানান অজুহাতে সরানো হয়েছে। এছাড়া কোন নিয়োগে সভাপতির পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে রাজি না হলেই তিনি ওই অধ্যক্ষকে সরিয়ে দেন এমন অভিযোগ করেছেন। অতীতে অনিয়মে জড়িত একজনকে আবার চতুর্থবারের মত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এদিকে কলেজ পরিচালনা কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৬ ফেব্রুয়ারি। তাই অবৈধভাবে ঘুষের বিনিময়ে পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে সভাপতি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের তাড়া শুরু করেছেন। এজন্য নিয়মনীতি তোয়াক্কা করছেন না। বিশ^বিদ্যালয়, ডিজি ও ডিসির প্রতিনিধির অনুমতি না নিয়েই পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
মো. আব্দুল খালেক নামের এক শিক্ষক ১ মাস ৫ দিন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বলেন, কলেজের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের (গভর্নিং বডির) সভাপতি ফজলে নূর বাচ্চুর মেয়াদ আর বেশিদিন নেই। তিনি আরেকবার সভাপতি থাকতে চান। পট পরিবর্তনের কারণে এ ব্যাপারে আমি তাকে সহযোগিতা করতে অসম্মতি জানালে তিনি আমার ওপর ক্ষুব্ধ হন। এছাড়া তিনি কলেজের বিভিন্ন খাতের টাকা নয়ছয়ের হিসাব দেখিয়ে আপনিও খান আমাকেও দিয়েন বলে প্রস্তাব দেন। কিন্তু আমি তার প্রস্তাবে সায় না দিয়ে কলেজের আর্থিক অনিয়ম ও শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করেছি। এ জন্য সভাপতি বাচ্চু আমাকে অধ্যক্ষের পদ থেকে সরিয়ে দেন। এক প্রশ্নের জবাবে খালেক বলেন, প্রতিষ্ঠানের প্রধান যদি নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য শিক্ষকদের ওপর ক্ষমতার অপব্যবহার করেন তাহলে তো ক্ষোভ ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিবেই। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষক-কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
কায়েদে আজম দুলাল নামের শিক্ষক বলেন, আমি ১১ মাস ৫ দিন অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলাম। কলেজে কেউ হিতৈষি সদস্য হতে চাইলে তাকে ৫০ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। একজন সদস্য টাকা জমা দিয়েছেন কিনা তা নিয়ে অষ্পটতার জন্য আমি সংশ্লিষ্টদের শোকজ করি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গভর্নিং বডির সভাপতি বাচ্চু আমাকে বিষয়ভিত্তিক অযোগ্যতা দেখিয়ে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন। অপর শিক্ষক দীপেন্দ্র নাথ রায় বলেন, আমি অনৈতিক প্রস্তাব না মানাসহ নানা কারণে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করে অব্যাহতি নিয়েছি।
বর্তমান ভারাপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ চতুর্থবারের মত গত ৩ জানুয়ারি থেকে দায়িত্ব পাওয়া আহসান হাবিব বলেন, কেউ সঠিকভাবে হয়তো দায়িত্ব পালন করতে পারেন নি । তাই আমাকে আবার দায়িত্ব দিয়েছেন।
পছন্দের শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়েই শুরু করেছেন নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া। অভিযোগ উঠেছে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের (গভর্নিং বডির) সভাপতি মিলে কয়েক লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে দুটি পদে পছন্দের দুই প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে উঠে পড়ে লেগেছেন। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই নিয়োগ প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করেছেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আর ১১ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পরীক্ষার দিন তারিখ ঠিক করা হয়েছে। এজন্য পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটির সভা করা হয়েছে। এ সভায় শিক্ষক প্রতিনিধিদের ডাকা হয়নি। ঘুষ নিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নীতিমালা মেনেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। তবে বিশ^বিদ্যালয়, ডিজি ও ডিসির প্রতিনিধির দেওয়া তারিখেই নিযোগ পরীক্ষা হবে। এজন্য পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন হতে পারে। তা অবশ্যই ১৬ ফেব্রুয়ারির আগেই হতে হবে।
এ বিষয়ে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের (গভর্নিং বডির) সভাপতি ফজলে নূর বাচ্চু বলেন, কলেজের কার্যক্রম সঠিকভাবে না চলার কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক কয়েকজন শিক্ষককে অধ্যক্ষের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে এটা ঠিক। এতে অন্য কোনো ব্যাপার নেই। কাউকে কোন অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। দিন নির্ধারণ করে আবেদনকারী আগ্রহী প্রার্থীদের পরীক্ষা নেয়া হবে। নতুন করে দুটি পদের নিয়োগে কোন অনিয়ম হলে এর দায়দায়িত্ব ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের ঘাড়ে পড়বে। বিশ^বিদ্যালয়, ডিজি ও ডিসির প্রতিনিধিকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। নিয়োগটি স্বচ্ছ ও সঠিকভাবে করা হবে। #