শহীদুল ইসলাম শহীদ, পঞ্চগড়।।
পঞ্চগড়ের দুই উপজেলায় দুই ব্যাক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের করতোয়া নদীর সাঁতালপাড়া ঘাটে একজন এবং সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউপির ডোলপাড়া গ্রামে মাটি খুঁড়ে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
পঞ্চগড়ে পৃথক উপজেলায় নিখোঁজের দুইদিন পর মাটিচাপা অবস্থায় টাবুল বর্মন (৪৮) ও নিখোঁজের ৭ দিন পর হাত-পা বাধা অবস্থায় নুরুল ইসলাম (৪০) নামে দুই ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৮ টায় পঞ্চগড় সদর উপজেলার চালকাহাট ইউনিয়নে ও সন্ধায় বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের সাঁওতালপাড়া ঘাট থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে টাবুল বর্মনকে মাটি চাপা অবস্থায় ও নুরুল ইসলামকে হাত-পা বাধা অবস্থায় নদীতে ভাসমান পাওয়া যায়। লাশ দুটির সুরতহাল শেষে শনিবার সকালে ময়না তদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার বেলা একটায় পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা তার অফিস কক্ষে আয়োজিত এক প্রেসবিফ্রিংয়ে জানান, দুটি হত্যাকান্ডই পরিকল্পিত। দুটি হত্যাকান্ডে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে। পরিকিয়ার সর্ম্পক ইতি টানতে টাবুলকে ৩০ হাজার টাকার চুক্তিতে খুন করে মাটি চাপা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ললিতা বর্মন (৪০) ও তার মেয়ে জামাই প্রভাত চন্দ্র রায়কে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অটো ছিনতাই করতে অটোচালক নুরুল ইসলামকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সন্দেহজনকভাবে একই উপজেলার কুমারপাড়া গ্রামের মো. আলম (২৪) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে হত্যার রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ও পুলিশের নিবিড় তত্বাবধানে দ্রুত দুটি হত্যাকান্ডের কিনারা করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। দুটি হত্যার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তসহ গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। তিনি আশা করেন আসামীদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করা হবে। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম সফিকুল ইসলাম, কনক কান্তি দাস, আমিরুল্লাহ আমির, ওসি ডিবি মোজাফফর রহমান, বোদা থানার ওসি মো. মোজাম্মেলল হক, পঞ্চগড় সদর থানার ওসি প্রদীপ কুমার রায় উপস্থিত ছিলেন।
নিহত টাবুল বর্মন পঞ্চগড় সদরের মাগুড়া ইউনিয়নের লাখেরাজ ঘুমটি এলাকার হাগিরাম বর্মনের ছেলে, পেশায় তিনি একজন কৃষক ও নুরুল ইসলাম বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের মুসলিমপুর কাউয়া খাল এলাকার মৃত ইয়াসিন আলীর ছেলে। পেশায় তিনি একজন ভ্যান চালক।
পুলিশ ও স্থানীয়সুত্রে জানা গেছে, টাবুল বর্মন ও একই এলাকার মন্টু রায়ের স্ত্রী ললিতা রানীর (৪০) পরকিয়ার সম্পর্ক ছিল। এদিকে গত ৩১ জানুয়ারি (বুধবার) বিকেলে টাবুল নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে আলসিয়াখানা বাজার গেলে নিখোঁজ হয়ে যায়। এর পর গভীর রাতেও সে বাড়িতে না ফেরায় ১ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) টাবুলের ছোট ভাই গোবিন্দ চন্দ্র বর্মন পঞ্চগড় সদর থানায় একটি জিডি করেন। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে পরকিয়ার বিষয়টি জানলে ললিতা রানী ও তার মেয়ে মনিকা (২৩) এবং জামাই প্রভাত চন্দ্র রায়কে (২৫) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়। এদিকে শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ললিতার দেয়া তথ্যমতে টাবুলের মরদেহ চালকাহাট ইউনিয়নের ডলোপাড়া গ্রামের একটি আমবাগানের খাল থেকে মাটি চাপা অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। তবে ললিতার গ্রেপ্তারের পর তার স্বামী মন্টু রায় আত্মগোপনে চলে যায়।
এদিকে, বোদা উপজেলায় মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের করতোয়া নদী হতে নিখোঁজের ৭ দিন পর নুরুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। জানা গেছে গত ২৭ জানুয়ারি ভ্যান নিয়ে বের হয়ে নিখোঁজ হয় সে। নিখোঁজের দুদিন পরে দেবীগঞ্জ সড়কে পাশে অটোভ্যানটি পাওয়া গেলেও পরে তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে ২৮ জানুয়ারি তার স্ত্রী শেফালি বেগম নিখোঁজের ঘটনায় থানায় সাধারন ডায়েরি করেন। পরে গত ৩০ জানুয়ারি অজ্ঞাত ৪-৫জনের নামে অটো ছিনতাই এবং অপহরনের অভিযোগে শেফালি বেগম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলার পরপরই মো. আলম নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। স্থানীয়রা শুক্রবার বিকালে সাঁওতালপাড়া ঘাটে করতোয়া নদীতে একটি হাত-পা বাধা মরদেহ ভাসতে দেখে। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করলে তার পরিচয় শনাক্ত হয়। তিনি বোদা উপজেলার কাউয়াখাল এলাকার মৃত ইয়াসিন আলীর ছেলে। #