পঞ্চগড় প্রতিনিধি ।। পঞ্চগড়ে এই সপ্তাহেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ৯৯ তম সালানা জলসা। জলসাকে কেন্দ্র করে জেলায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেটট, পুলিশ, র্যাব, বিজিবির নেতৃত্বে আইনৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শহর ও এলাকায় টহল দিচ্ছে। তবে কবে থেকে জলসা শুরু হচ্ছে স্পষ্ট করেনি কেউ। এরই মধ্যে পঞ্চগড় জেলা সদরের আহম্মদনগরসহ পুরো জেলায় বিপুল সংখ্যক আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সদর উপজেলার স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসাসহ ২৬ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করবেন বলে চিঠিও দিয়েছে জেলা প্রশাসন। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান করবেন ওই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ দিন পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. রিয়াজ উদ্দিন সাক্ষরিত একটি চিঠিতে লেখা রয়েছে ‘আগামী ১১ ফ্রেবুয়ারি থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের এ জেলায় অবস্থান করবেন। এ জেলায় তাদের উপযুক্ত পরিবেশে অবস্থানের স্বার্থে জেলার কতিপয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত করা হয়েছে। নির্ধারিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে পুলিশ সদস্যদের অবস্থানকালে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, খাবার পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশনসহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
সোমবার সরেজমিনে আহম্মদনগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের নির্ধারিত মাঠে তারা বার্ষিক সালানা জলসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জলসা মাঠে তাদের কর্মী ও সমর্থকরা ভিড় করছেন। বাইরে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। এই এলাকার চারপাশ দিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও রাস্তা ঘাটে শতশত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জেলা শহরের আবাসিক হোটেলসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতেও মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। তবে এই সম্প্রদায়ের কেউ জলসা বিষয়ে কোন মন্তব্য করছেন না। এবার তাদের সালানা জলসা করার কথা ছিলো ২৩ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি। এখন সেটি ১২ থেকে ১৫ ফেব্রয়ারির মধ্যেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মূখপাত্র আহমদ তবশীর চৌধুরী এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি। কেবল বলেছেন আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ধর্মকর্ম পালন করতে চাই।
এদিকে রবিবার সকালে জেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় আহমদিয়া মুসলিম জামাতের বার্ষিক সালানা জলসায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে আলোচনা হয়। সেখানে আহমদিয়াদের জলসা বিরোধী উস্কানিমূলক বক্তব্য ও কোন কর্মসূচি নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য সিনিয়র সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল মালেক বলেন, জেলা প্রশাসনের দেয়া চিঠির আলোকে আগামী ৫ দিন নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ থাকবে। তবে বিদ্যালয়ের অন্য সব কার্যক্রম চলমান থাকবে।
জেলা পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা বলেন, এবার আহমদিয়া মুসলিম জামাতের সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা সভাতেও আলোচনা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফোর্স থাকবে। এর মধ্যেই জলসা অনুষ্ঠিত হবে। বিস্তারিত আমরা পরে ব্রিফিং করবো।
১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে.কর্নেল যুবায়েদ হাসান বলে সীমান্তের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সীমান্তের যে কোন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিজিবি দায়িত্ব পালনে সজাগ আছে। বেসামরিক প্রশাসন চাইলে সালানা জলসার নিরাপত্তায় বিজিবি দায়িত্ব পালন করবে। এজন্য বিজিবি নিরাপত্তার স্বার্থে বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতার অংশ হিসেবে কাজ করছে।
জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, আহমদিয়া জামাতের বার্ষিক সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে কোন ধরণের উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচার করলেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। যে কোন ধরণের উস্কানি বরদাশত করা হবে না। তারা তাদের নির্ধারিত স্থানে জলসা করবে এতে কারো আপত্তি করা ঠিক হবে না। কে মুসলমান আর কে কাফের এটা বলার ক্ষমতা কাউকে দেয়নি সংবিধান। সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা যেন কেউ ঘটাতে না পারে এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর আছে।
গত কয়েক বছর ধরেই আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসা বন্ধ ও তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল ইসলাম ধর্মীয় বিভিন্ন সংগঠন। গত বছরের ২ থেকে ৪ মার্চ আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপর হামলা ও তাদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ আহত। ওই ঘটনায় ২ জন নিহত হয়। ঘটনার পর ত্রিশেরও অধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১৫ হাজার জনকে আসামী করা হয়েছে। এবারও জলসা বন্ধের দাবিতে গত ২৮ জানুয়ারি সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ পরিষদ জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে। শুক্রবার ঢাকার বাইতুল মোকাররম মসজিদের সামনে বিক্ষোভ করে ইসলাম ধর্মীয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা জলসা বন্ধের দাবিতে রোড মার্চের হুশিয়ারি দেয়। #
প্রকাশক/সম্পাদক :- শাওন আমিন।। ব্যাবস্থাপনা সম্পাদক :- মোঃ গিয়াস উদ্দিন।। নির্বাহী সম্পাদক :- ঝড় আমীন।। প্রধান কার্যালয় :- হালিশহর, চট্রগ্রাম। মুঠোফোন :- +৮৮০১৭১২০৬১১৬৩ ঢাকা কার্যালয়:-বাসা নং ৫১/৩,ধানমন্ডি ৩/এ, ঢাকা।-১২০৯ মুঠোফোন :- +৮৮০১৭১২৪১৫৮৫৩,+৮৮০১৫৮০৮২০৬৬৩,+৮৮০১৭১২০৬১১৬৩
E-mail :- newszhor@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত. বাংলাদেশ হোস্টিং