তবে স্থানীয়রা এই ভুয়া সাংবাদিকদের বিষয়ে মুখ খুললেও প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। কেননা অধিকাংশ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাই দুর্নীতির সাথে জড়িত আছে। প্রশাসনের এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে জেলায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই ভুয়া সাংবাদিকরা। আর এতে বিপাকে পড়ছেন পেশাদার সাংবাদিকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, “কিছুদিন আগে আমার কাছে এক সাংবাদিক ২০০টাকা নিয়েছে। আমার ছেলের হারিয়ে যাওয়ার সংবাদটি পত্রিকায় প্রকাশ করবে বলে। টাকা নেওয়ার পরে ঐ সাংবাদিকের আর কোন খোঁজ-খবর নাই। পরে আরেক জনের সহযোগিতায় অন্য এক সাংবাদিক কোন টাকা ছাড়াই আমার ছেলের হারিয়ে যাওয়া সংবাদ করে দিয়েছে এবং পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর আমার ছেলেকে আমি খুঁজে পেয়েছি।”
আরেক বাসিন্দা বলেন, “পীরগঞ্জ থানার সামনে দেখবেন সাংবাদিক পরিচয়ে কিছু ব্যক্তি সন্ধ্যার পর ঘুর ঘুর করে। ওরা সাংবাদিক পরিচয়ে থানায় গিয়ে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন মামলার তদবিরও করে।”
এক পুলিশ সদস্য বলেন, “সাংবাদিকের কাজ সংবাদের জন্য তথ্য সংগ্রহ করে সংবাদ লেখা। কিন্তু পীরগঞ্জে দেখতেছি অমুক তমুক পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে থানায় এসে মামলার বিষয়ে সুপারিশ করে।”
কিছু ‘সাংবাদিকের’ কর্মকাণ্ডে ক্ষুদ্ধ হয়ে আবদুস সামি নামে ঠাকুরগাঁওয়ের এক শিক্ষার্থী ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন- “একজন সাংবাদিক হচ্ছেন একজন সমাজ সচেতন নাগরিক। জনগণ, সমাজ আর মিডিয়ার মাঝে তিনি একজন মিডিয়াম। তিনি অতি দায়িত্বশীল একজন ব্যক্তি, মানে তাকে দায়িত্বশীল হতেই হবে। একজন সাংবাদিক সমাজের নানান অসঙ্গতি, সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ সবার কাছে তুলে ধরবেন, সমাধানের আহব্বান জানাবেন এবং সমস্যা সমাধানের জন্য পরামর্শ বা বিকল্প পথ বলে দিতে পারেন। কিন্তু তিনি কখনই একটা উপসংহারে যেতে পারবেন না, কোন নির্দেশ বা আদেশ দিতে পারবেন না অবশ্যই। যদি এমন করেন তাহলে তিনি যত প্রভাবশালীই হোন না কেন, তিনি কখনো সাংবাদিক হবেন না, হবেন একজন পথভ্রষ্ট। তিনি যেমন নির্দিষ্ট কোন দলের পক্ষ নিতে পারবেন না তেমনি কোন নির্দিষ্ট দলের বিপক্ষেও যেতে পারবেন না, তাকে হতে হবে বস্তু নিরপেক্ষ।”
“একটা কোর্স সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশুনা করে কম ধারণা হয়নি সাংবাদিকতা আর এজেন্ডা সেটিং নিয়ে। টেলিভিশনের ৩৬০ ডিগ্রি, তালাশ এইসব অনুষ্ঠান অনেক জনপ্রিয়। আমরা এসব অনুষ্ঠানে অনেক সমস্যা তুলে ধরতে দেখেছি তাদের। তারা ইনভেস্টিগেশন করেন, অ্যানালাইসিস করেন, প্রমাণ দেখান; কিন্তু কখনোই উপসংহার টানেন না।
একজন সাংবাদিক কখনোই আদালতের রায়কে নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবেন না সরাসরি। সাংবাদিক কেন, আমরাই পারব না। একজন সাংবাদিক কখনোই আরেকজন মানুষকে হত্যা বা মারার হুমকি দিতে পারবেন না পাবলিকলি। আমার নিজের শহরের এমন একজন সাংবাদিককে চিনি। যোগ্যতা জানি না, তবে তার নানান কর্মকান্ডের স্ক্রিনশট আছে আমার কাছে। সাম্প্রদায়িকতামূলক নানান পোস্ট ও উস্কানিমূলক পোস্টও আছে তার। আবার যৌনতামূলক পোস্টও আছে। ফেসবুকে সরাসরি আরেকজনকে মারার কথারও পোস্ট আছে। আছে আরো অনেক কিছু।”
ঠাকুরগাঁওয়ে ছোট শহর হিসেবে অনেকেই সাংবাদিকতায় সুনাম অর্জন করছে। অনেকে অনেক ভাল ভাল, উল্লেখযোগ্য কাজ করছেন। এদের মাঝে এমন একজন সাংবাদিক থাকা ভাইরাসের মতো এবং এটা সাংবাদিকতা পেশাটাকে নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। ঠাকুরগাঁও ছোট শহর। দেশের আর দশজনের মত এখানকার বেশিরভাগ সাধারণ মানুষই সংবাদ ও সাংবাদিকতা সম্পর্কে কম জানে। এটাই স্বাভাবিক। এমন ভুয়া সাংবাদিকরা সাধারণ মানুষদের মাঝে ছড়াচ্ছেন বিভ্রান্তি, কারণ তাদের অনুসরণও করছেন অনেকে।
প্রশ্ন হচ্ছে, উনি যেহেতু সরাসরি ‘Hate Crime’ সাম্প্রদায়িকতা উস্কানিমূলক কর্মকান্ড অব্যহত রেখেছেন সেহেতু আমার মতে তার কর্মকান্ড সরাসরি ৫৭ ধারা অণুযায়ী আইন বিরোধী। এমতাবস্থায় তার কর্মকান্ডের প্রমাণ আমাদের প্রশাসনকে জানানো উচিৎ নয় কি? তার জন্য অন্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কেন?
প্রকৃত সাংবাদিকরা ঐক্যজোট না থাকায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন পীরগঞ্জ প্রেসকাবের সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সংবাদদাতা মেহের এলাহী।
তিনি বলেন, “প্রকৃত সাংবাদিকরা একত্রিত না থাকায় রাজনীতিবিদরা এই সুযোগ নিচ্ছে। দলীয় লোকদের সাংবাদিক বানিয়ে পেশাদার সাংবাদিকদের বিপাকে ফেলানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে রাজনীতিবিদরা। খোঁজ নিয়ে দেখবেন, পীরগঞ্জ উপজেলায় সরকার দলীয় নেতাদের অনেকে বেশ কয়েকটি সাংবাদিক সংগঠন খুলে পদও দখল করে রেখেছেন। সাংবাদিক পরিচয়কে ব্যবহার করে তারা সুবি