ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি : আশপাশের জেলার শতাধিক কৃষক সরকারি ভর্তুকিতে হারভেস্টার কিনে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। নিম্নমানের মেশিন সরবরাহ, অতিরিক্ত দামে বিক্রি এবং কিস্তির টাকা আদায়ে হয়রানির অভিযোগ তুলে তারা বিক্ষোভ করেছেন। এছাড়াও ফাঁকা চেকের মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগও উঠেছে।
আজ বিকেলে ঠাকুরগাঁও জেলা শহরের এসিআই মটরস শোরুমের সামনে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভকারী কৃষকরা জানান, সরকারের ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের’ আওতায় ৫০% ভর্তুকিতে হারভেস্টার কেনার সুযোগ পেলেও কোম্পানিগুলো উন্নতমানের মেশিন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিম্নমানের চীনা হারভেস্টার সরবরাহ করেছে, যা খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।
একজন ভুক্তভোগী কৃষক আব্দুল কুদ্দুস জানান, “আমাদের মৌসুম থাকে ১৫ থেকে ২০ দিন। কিন্তু মেশিনগুলো প্রায়ই নষ্ট হয়ে যায়। মেরামত করতে গেলে কোম্পানি সময় নেয় ৩-৪ দিন। ফলে ধান কাটা শেষ করতেই পারি না।”
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কৃষকরা বলেন, হারভেস্টার ক্রয়ের সময় তাদের বলা হয়েছিল মেশিনগুলো উন্নত প্রযুক্তির জাপানি মডেলের। কিন্তু সরবরাহ করা হয়েছে নিম্নমানের চীনা মেশিন। এসব মেশিনের বাজারমূল্য ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা হলেও তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৩৬ থেকে ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১৪ থেকে ১৫.৫ লাখ টাকা সরকারি ভর্তুকি ছিল।
কৃষকদের অভিযোগ, মেশিন বিক্রির সময় বলা হয়েছিল যেকোনো সমস্যায় দ্রুত সেবা দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে কোম্পানির সার্ভিস পেতে দেরি হয়। অনেক সময় প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ পাওয়া যায় না, আবার পাওয়া গেলেও বাজারদরের তুলনায় ১০ গুণ বেশি দামে কিনতে হয়।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কৃষক মামুনুর রশিদ অভিযোগ করেন, কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে দেরি হলে তাদের বিরুদ্ধে ফাঁকা চেকের মামলা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি কিস্তির টাকা পরিশোধের পরও রসিদ দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ করেন অনেকে।
আব্দুল্লাহ আল আমিন নামের এক কৃষক বলেন, “মেশিন নষ্ট হলে সেবার জন্য ফোন দিলে কোম্পানি দেরিতে সাড়া দেয়। দ্রুত কাজ সারতে গিয়ে আমাদের পকেট থেকে বাড়তি টাকা খরচ করতে হয়।”
আরেক কৃষক মোঃ মোজাম্মেল বলেন, “জমি বিক্রি করে কিস্তির টাকা পরিশোধ করেছি। কিন্তু এখনো মামলার ভয় দেখানো হচ্ছে। আমরা কি এভাবেই সর্বস্বান্ত হবো?”
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কৃষকরা প্রতারণার শিকার হওয়া কৃষকদের ক্ষতিপূরণ, দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার এবং হারভেস্টারের ঋণ মওকুফের দাবি জানান।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি প্রকৌশলী মোঃ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “কৃষকেরা যাতে কোনো হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”