1. info@www.dailyzhornews.com : দৈনিক ঝড় :
রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫, ০৫:০৮ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
পঞ্চগড়ে নাশকতা হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামী মোশারফ আটক পঞ্চগড়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চেকপোষ্ট বসিয়ে তল্লাশি  পলাশবাড়ীতে বাসের সাথে অটোরিকশার সংঘর্ষ নিহত -৩ গোবিন্দগঞ্জ সড়কে বাসচাপায় প্রান গেল চেইন মাস্টারের গোবিন্দগঞ্জে মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী স্বামী- স্ত্রী নিহত পাবনার চাটমোহরে কমিউনিটি হেল্থ প্রোভাইডার লীডার আব্দুল আজিজ ইন্তেকাল করেছেন এলাকায় শোকের ছায়া পবিত্র ঈদ উল আযহা উপলক্ষে ঠাকুরগাঁও জেলার সকল সাংবাদিকদেরকে পবিত্র ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন লুৎফর রহমান মিঠু পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ২২ নং সেনুয়া ইউনিয়নবাসী সহ দেশবাসী ‘কে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন চেয়ারম্যান মতিউর পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে জনতার মেয়র শরিফুল ইসলাম শরীফ ঠাকুরগাঁও পৌর বাসী’কে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কুরবানির আদর্শে মানবতা ও পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা কুরবানিতে আমাদের করণীয়

হৃদয়-পথের রোদে একরাশ মেঘ ছড়িয়ে…

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫
  • ৩৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদন।। খালিদের প্রতিটি গানই সুরুচির পরিচায়ক। সেই যে ৮০-র পরেপরে শুরু করলেন গান গাওয়া, চাইম ব্যান্ডের লিড ভোকালিস্ট হিসেবে তাঁর গাওয়া প্রতিটি গানই শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে গেছে সুন্দর কথা আর মনকাড়া সুরের জন্য। কীর্তনখোলা’র পারের ছেলে খালিদ নিজেকে বলতেন গাঁয়ের ছেলে। তাঁর ব্যান্ড চাইমও লোকগানের প্রতি বিপুল আগ্রহী ছিলো। চাইমের সবচেয়ে জনপ্রিয় গানটিই তো লোকজ ধাঁচের – নাতি খাতি বেলা গেইলো, শুতি পারলাম না, আহারে সদরুদ্দির মা। এই গানটি কোনো চিরায়ত বাংলা লোকগান, নাকি তাঁদের নিজেদেরই (বা চাইমের জন্য আর কারও লিখা ও সুর করা) গান, তা আমার জানা নেই। রিলিজ হওয়ার সময় অ্যালবাম কভারে নিশ্চয়ই সে তথ্য লেখা ছিলো, আমার এখন আর মনে পড়ছে না। কিন্তু গানের বাণী চিরায়ত লোকগীতিরই প্রমাণ রাখে।

‘বড় চাচার গরু ছুটে লাউয়ের জাংলা খাইলো
চাচা আইসে খালি খালি চাচীরে কেন্ মাইল্লো
সময় কইরে বাড়ির কেউ তো চোহি দ্যাকলো না!
আহারে সদরুদ্দির মা’

কথাগুলো গ্রামীণ জীবনের চিরায়ত জীবনধারার এক শাশ্বত নিদর্শন। … আবার কীর্তনখোলা নদী নিয়ে অপূর্ব সুন্দর একটি গানও সে সময় উপহার দিয়েছিলো চাইম ব্যান্ড।

বিশ্ববিদ্যালয়-কেন্দ্রীক উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার অপরূপ এক নমুনা তাঁরা উপস্থাপন করেছিলেন “উচ্চশিক্ষা” নামক গানটির মাধ্যমে।

‘পড়ালেখা শেষ করে বেকারত্বের যুগে মোরা
এ কেমন অভিশাপ বলো
কেউ নেতা বনে যায়, কেউ প্রেমের তরী বায়
ডিমোশনে হয় টলোমলো
এ কেমন অভিশাপ বলো…’

এ রকম কথার এবং কীর্তন আঙ্গিকের প্যারোডি সুরে তৈরি সেই গান সে কালে চিন্তার খোরাক জুগিয়েছিলো মননশীল যেকোনো মানুষকে।

আবার, বাংলার নারীদের চিরায়ত দুঃখ কালো রঙ নিয়েও যুগোপযোগী গান করেছিলেন চাইম ব্যান্ডের খালিদ। ‘কালো মাইয়া কালো বইলা কইরো না কেউ হেলা…’ এ রকম কথার সেই গান এক দুঃসহ সামাজিক সংকটের কথা তরুণ শ্রোতাদের ভাবতে অনুপ্রাণিত করেছে।

তাদের আরেকটি গান, ‘ও আমার হাঁসের ছাও রে…’ গ্রামীণ জীবনের আরেক নিত্য-ঘটনা তুলে এনেছে হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিতে। … এসব হলো ব্যান্ড মিউজিকের ভরা যৌবনে বাংলা লোকজ সংগীতকে দেওয়া চাইমের অবদান, খালিদ সাইফুল্লাহ্’র অবদান।

সোলস, ফিডব্যাক ও মাইলসের পরেই গড়ে ওঠে চাইম ব্যান্ডটি। বিটিভিতে ব্যান্ড শো’তে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে রাতারাতি সারা দেশে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তারা। সে সময়েই নজর কাড়েন খালিদ, তাঁর দরাজ কণ্ঠ আর স্টাইলিশ পারফরমেন্সের দ্বারা। জিন্স, টিশার্ট, কেডস, সানগ্লাসের সাথে লম্বা চুলের গেটআপে নিজের একটা পারফেক্ট রকস্টার ইমেজ গড়ে তুলতে সক্ষম হন তিনি। সেই তিরাশি-চুরাশির দিকে তাঁর স্টাইলিশ পারফরম্যান্স অনুকরণ করতেন সমকালীন অনেক ব্যান্ড তারকা। কেবল দর্শনধারীই নন, তিনি ছিলেন প্রকৃত গুণবিচারীও। সে কালে সোলসের তপন চৌধুরী ও নাসিম আলী খান, ফিডব্যাকের মাকসুদ আর চাইমের খালিদ – এঁরাই ছিলেন বাংলা ব্যান্ডের সবচেয়ে আইকনিক ভোকাল। জেমস তখনও নজর কাড়তে পারেননি, আইয়ূব বাচ্চু সেভাবে গাইতে শুরুই করেননি, পার্থ বড়ুয়া এলেন আরও পরে, মাইলসের হামিন ও শাফিন তখনও বাংলা গান করছেন না। কোনোপ্রকার ফাঁকিঝুঁকিহীন, একেবারে তৈরি গলায় গান করতেন খালিদ। কণ্ঠে যেমন ছিলো আবেগ, তেমনি ছিলো জোর। অনেক চড়াইয়ে উঠে যেতে পারতেন সাবলীলভাবে, নাকি-সুর লাগাতেন না, গাইতেন শুদ্ধ উচ্চারণে, স্পষ্ট স্বরে।

নব্বইয়ের মাঝামাঝি সময়ে যখন ব্যান্ড তারকাদের মিক্সড অ্যালবামের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়তে থাকলো, খালিদের যেন পুনর্জন্ম দেখলাম আমরা। একের পর এক মিক্সড অ্যালবাম, খালিদের কণ্ঠে একের পর এক হিট সিংগলস। তখনকার সময়ে জনপ্রিয় সব ব্যান্ডের ভোকালিস্টদের নিয়ে মিক্সড অ্যালবামগুলো প্রকাশিত হলেও, দশ বারোটা গান থেকে হিট করতো দুই-তিনটি বড়জোর। সেই দু’তিনটির মধ্যে খালিদের একটি গান থাকতো। আর, সেই কাল থেকে এই কালে এসে, আজ প্রায় তিন দশক পরের অবস্থানে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, দুই-তিনটিও নয়, বড়জোর একটি করে গানই টিকে আছে, যে গানটি খালিদের গাওয়া। সরলতার প্রতিমা, যদি হিমালয় হয়ে, কোনো কারণেই ফেরানো গেল না তাকে, আবার দেখা হবে/এখনই শেষ দেখা নয়, হয়নি যাবার বেলা, আকাশনীলা… বিভিন্ন মিক্সড অ্যালবামের এই গানগুলোর সবই সময়োত্তীর্ণ হয়ে ক্রমশ এগিয়ে চলেছে কালজয়ী বাংলা গান হওয়ার পথে।

যে কথাটি দিয়ে শুরু করেছিলাম, খালিদের গাওয়া প্রতিটি গানের লিরিক ও সুরে দারুণভাবে সুরুচির পরিচয় পাওয়া যায়। গানগুলোর খুব কমই তাঁর লেখা বা সুর করা। কিন্তু তিনি লিরিক বুঝতেন, সুর চিনতেন। তাই দশ-বারোজন শিল্পীর জন্য করা দশ বারোটা গান থেকে ঠিকঠাক বেছে নিতে পারতেন নিজের জন্য সেরা গানটাই। কিংবা কে জানে, গানের কম্পোজারই হয়তো তাঁর জন্য আলাদা করে রাখতেন তাঁর সেরা কাজটা। ‘সে যে হৃদয় পথের রোদে একরাশ মেঘ ছড়িয়ে/ হারিয়ে গেল নিমেষেই…’ ভেবে দেখুন তো, প্রেমে ভেঙ্গে যাওয়ায় প্রেমিকাকে দোষারোপ করার, তাকে রীতিমতো ভিলেইন বানিয়ে দেওয়ার গাজোয়ারির কালে তিনি কত নান্দনিকভাবে তুলে ধরলেন ভালোবাসা হারানোর কথা। প্রতিপক্ষকে দোষারোপ করার জনপ্রিয় চর্চার কালেই তিনি স্পষ্ট স্বরে উচ্চারণ করলেন – ‘নীরা, ক্ষমা ক’রো আমাকে/ এতটুকু সুখ তোমায় পরিনি দিতে!’ এমনটাই কি হওয়া উচিত নয় সকল ক্ষেত্রে? আবার দেখুন, ভালোবাসা হারানোর দুঃখকে কী অদ্ভুতভাবে তিনি বর্ণনা করলেন একটামাত্র বাক্যে – ‘যদি হিমালয় হয়ে দুঃখ আসে এ হৃদয়ে, সে কিছুই নয়!’ কিংবা, ‘যাবার বেলায় শুধু সান্ত্বনা, নয় কান্না – আবার দেখা হবে, এখনই শেষ দেখা নয়’ এভাবেও তো সম্পর্কের ইতি টানা যায়। ‘তুমি আকাশের বুকে বিশালতার উপমা/ তুমি আমার চোখেতে সরলতার প্রতিমা’ – এভাবেই বুঝি কমপ্লিমেন্ট দিতে হয় প্রেয়সীকে।

খালিদ চলে গেলেন ষাট বছর বয়সে। মধ্যম গড় আয়ূর দেশে ষাট বছর তেমন বেশি না হলেও খুব কম বয়স নয়। কিন্তু ব্যক্তিগত জানাশোনা থেকে উপলব্ধি করি, তিনি হয়তো আরও কিছুদিন থাকতে পারতেন। সঞ্জীব চৌধুরীর মতো তিনিও বুঝি অপচয় করে গেলেন নিজের যোগ্যতাকে, প্রতিভাকে, জীবনটাকেই। শেষ দশ বছরে তেমন-একটা গান করেননি। নতুন গান ছিলো কি না, আমার শোনা হয়নি। তাঁর জীবনযাপনও খুব সুশৃঙ্খল ছিলো না। প্রবাসে স্থায়ী ঠিকানা গড়েছিলেন। তবু দেশে ছুটে আসতেন বারবার। গান করতে চাইতেন। নতুন কিছু করতে চাইতেন। থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্র দেশটা হয়তো ভালো, কিন্তু সে তো আমজনতার ক্ষেত্রে। একজন শিল্পীর জন্য, বাঙালি শিল্পীর জন্য কি ওই ভিনদেশ, বিজাতীয় সাংস্কৃতিক বাতাবরণ খুব অনুকূল? প্রবাস-জীবনে জীবিকার চিন্তা হয়তো তাঁর ছিলো না। কিন্তু মনের খোরাক কি ডলার গুনে মেটে? তাই হয়তো দেশে আসতেন বারবার গানের টানে। সে গান করা হতো না। এ দেশে যে গানের পরিবেশটাই গেছে বদলে! এখানে এখন সুরুচিবান গায়কের কোথায় স্থান? এখানে এখন চ্যানেল মালিক আর ইউটিউবারদেরই জয়জয়কার। তাদের মতো উদ্ভট কিছু করতে পারা তো খালিদের মতো শিল্পীর পক্ষে সম্ভব ছিলো না। যে অভিমানে মাত্র সপ্তাহখানেক আগে নিজেই নিজেকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে নিলেন সাদি মহম্মদ, সেই একই অভিমান হয়তো একটু অন্যভাবে ছিলো খালিদের মনেও। নয়তো এমন দরাজ কণ্ঠে বছরের পর বছর কোনো গান শোনা যায়নি কেন? দু’জনের মৃত্যু দুইভাবে হলেও, আমার কাছে তাই এই অসময়-যাত্রাকে অভিন্ন যাত্রাই মনে হয়।

খালিদ চলে গেলেন তাঁর আবেগমাখা দরাজ গলার গানগুলো রেখে, এক জীবনে বারবার ঘুরেফিরে শোনার জন্য যা যথেষ্ট। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ ক’জন আইকনিক শিল্পীকে হারালো আমাদের গানের জগত। আমাদের আধুনিক বাংলা গানের জগতে কেবল শূন্যতাই সৃষ্টি হচ্ছে একের পর এক। সে শূন্যতা পূরণ হচ্ছে কতটুকু? আরেকজন সুরুচিবান খালিদ সাইফুল্লাহ্ আসবেন আর কবে?

(গত বছর ‘আজকের পত্রিকা’য় প্রকাশিত হয়েছিল উপরের অংশটুকু।)

খালিদ সাইফুল্লাহ্, আমাদের প্রিয় খালিদ ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে এই প্রতিক্রিয়া লিখেছিলাম ফেসবুকে:

খালিদ সাইফুল্লাহ্। চাইমের খালিদ। খালিদ ভাইকে নিয়ে লিখলাম। বলা চলে, লিখতে বাধ্য হলাম। লিখাটা পাঠিয়েছি ‘আজকের পত্রিকা’য়। পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে ছাপা হবে যেহেতু, তাই ফেসবুকে এখনই দিলাম না।

মন্তব্য কলাম আকারে লিখা বিধায় এই লেখায় ব্যক্তিগত কথা কিছুই লিখিনি। তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত স্মৃতি খুব-একটা নেইও। পরিচয়টুকু ছিলো, ঘনিষ্ঠতার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। সেই পরিচয়ের কালে আমার তেমন কোনো গান প্রকাশিত হয়নি বলে আমাকে তিনি গীতিকার হিসেবে চিনতেন না। তবে অনেক পরে একটা অনুষ্ঠানে একটুখানি কথা বলার সুযোগ হয়েছিলো। ততদিনে তিনি আমাকে ভুলে গেছেন। আর্কের হাসান ভাই পরিচয় করিয়ে দিলেন – ভাই, ওর লেখা একটা গান কিন্তু আপনি প্রায়ই গুনগুন করেন – ‘বল না তুই বল না…’। খালিদ ভাই আমার হাত জড়িয়ে ধরে খুব জোরে ঝাঁকিয়ে দিয়েছিলেন। সেই করমোর্দনের উষ্ণতা আমি এখনও অনুভব করতে পারি।

খালিদ ভাইয়ের সাথে প্রথম যখন পরিচয় হয়, সেটা সম্ভবত ২০০৬ সালের কথা। আমি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলাম “আরশী” নামক অডিও কোম্পানিতে। এস আই টুটুল ছিলেন কোম্পানির চেয়ারম্যান, সাঈদ হাসান টিপু ছিলেন এমডি। আমি যোগ দিয়েছিলাম অ্যাডমিনে। যাহোক, আরশীর লঞ্চিং প্রোগ্রামে আমার সঙ্গে ছিলো আমার বন্ধু রাজু। রাজু তখনও বেকার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগের মাস্টার্স রাজুর সহজাত গানের গলা ছিলো খুব মায়াকাড়া। লোকগীতি খুব ভালো গাইতো। অনুষ্ঠানের দিন রাজুর সাথে আলাপ করিয়ে দিলাম খালিদ ভাইয়ের। খালিদ ভাই ভেনুর বাইরে এসেছিলেন সিগারেট খেতে। রাজু তার প্যাকেট থেকে সিগারেট দিয়েছিলো তাঁকে। সিগারেট খাওয়ার ফাঁকে তাঁকে গান শুনিয়েছিলো। তাঁরই গান। কীর্তনখোলা। খালিদ ভাই এরপর আরেকটা গান শুনতে চান, তারপর আরেকটা, তারপর আরও একটা। আর গান প্রতি সিগারেট খেতে থাকেন রাজুর প্যাকেট থেকে। রাজুর সিগারেটের প্যাকেট শেষ হয়ে যায়, গানের স্টক ফুরায় না। ঘণ্টাখানেক পর আমি রাজুকে খুঁজতে এসে দেখি, খালিদ ভাই তার সাথে ডুয়েট করছেন। না, রাজু তাঁর সাথে ডুয়েট করছে না, তিনিই রাজুর সাথে ডুয়েট করছেন, বলা চলে রাজুর কাছে গানটা শিখে নিচ্ছেন – “আরেকবার ফিরায়া দাও, সোহাগ মাখা মাটির উঠানখান/ আরেকবার ফিরায়া দাও, রাঙা আউশের গরম ভাত, জারী-সারী গান…”।

বিদায় নেয়ার সময় রাজুকে একটা “টাইট হাগ” দিলেন খালিদ ভাই। খর্বকায় গড়নের হালকাপাতলা রাজু খালিদ সাইফুল্লাহ্’র দশাসই শরীরের ভেতরে হারিয়ে গেল প্রায়। তারপর তাকে ছেড়ে দিয়ে আমাকে বললেন – এইটা একটা মাল! জাত শিল্পী। এর থেকে গান শিখলাম, এইটা আমি নিজের মনে গাইবো, রেকর্ড করবো না। কিন্তু এর গান আপনেরা রেকর্ড করবেন। নাইলে কিন্তু মা*ইরা ফালামু! … রাজু এরপর কতদিন যে খালিদ ভাইয়ের গল্প শুনিয়েছে আমাকে! সে বলতো, তার এ পর্যন্ত জীবনের সবচেয়ে সুখের অভিজ্ঞতাগুলোর একটা হলো, খালিদ ভাইয়ের সাথে কাটানো ওই একটা ঘণ্টা।

সেই রাজু গত হয়েছে আজ বারো বছর হতে চললো। খালিদ ভাইও পরপারে চলে গেছেন গতকাল। জানি না, ওপারে তাঁরা একে-অপরকে খুঁজে পেলেন কি না। আবার তাঁরা যুগলকণ্ঠে গান ধরেছেন কি না – আরেকবার ফিরায়া দাও…

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: বাংলাদেশ হোস্টিং