ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁওয়ে হস্ত ও কুটির শিল্প মেলার নামে অবৈধ লটারি-বাণিজ্য ও রাতে যাদু দেখানোর নামে অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন করার অভিযোগ উঠেছে। এ লটারির ড্র প্রতিদিন ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। যার ফলে লটারির খবর পৌঁছে যাচ্ছে ঘরে ঘরে।

সম্প্রতি মেলায় গিয়ে দেখা যায়, চটকদার সব বিজ্ঞাপন করে এবং মোটরসাইকেল, টিভি, ফ্রিজ রাইচ কুকারসহ বিভিন্ন ধরনের পুরস্কারের প্রলোভন ব্যাটারীচালিত ইজিবাইক দিয়ে চলছে লটারির টিকেট বিক্রি। ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার ডায়াবেটিক হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) শুরু হয় যা চলবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত।

মাইকে এসব লোভনীয় বিজ্ঞাপন শুনে লটারি কিনতে লটারি বিক্রেতাদের কাছে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ। কেউ কেউ ২০ টাকা মূল্যের এই লটারি ১০ থেকে ৫০টিও কিনছেন। কোনো ব্যক্তি আবার ১০টির অধিক লটারিও কিনছেন। লটারির টিকিট শুধু মেলা প্রাঙ্গণে নয়, টিকিট বিক্রির জন্য প্রতিদিন ৪০-৫০টি ইজিবাইক ছুটছে আশপাশের উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। পুরস্কারের লোভে লটারির ফাঁদে পড়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন রিকশা-ভ্যানচালক, নির্মাণ-শ্রমিক ও দিনমজুরের মতো শ্রমজীবী মানুষ। এমনকি স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরাও লটারির টিকিট কিনছে। যদিও উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন বলছে, লটারির টিকিট বিক্রীর বিষয়টি তাদের অজানা।

এদিকে লটারিতে সাধারণ মানুষ সর্বস্বান্ত হওয়ায় ও শিশুদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ায় লটারি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এর পরও লটারি বন্ধে প্রশাসন কোন উদ্যোগ নেয়নি।

অপরদিকে, ভিতরে সার্কাস ও যাদু দেখানোর নামে নর্তকী নিয়ে এসে অশ্লীল নৃত্য দেখানো হচ্ছে। যাকে গ্রামের মানুষ পুতুল নাচ বলে থাকে। ছোট ছোট বাচ্চাদের আবদারে চড়াও মূল্যে টিকিট কেটে মা-বাবা ভিতরে যাদু ও সার্কাস দেখতে গিয়ে লজ্জার মুখে ভিতর থেকে ফিরে আসতে দেখা গেছে।

সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসককে (ডিসি) ভুল বুঝিয়ে কোন রকমে মেলা চালানোর অনুমতি নেয় মেলা কমিটি।
অন্যদিকে রোববার (৬ এপ্রিল) ব্যাটারিচালিত বেশ কয়েকটি অটোরিক্সা পাশের উপজেলা রাণীশংকৈলে লটারির টিকিট বিক্রী করার সময় থানা পুলিশ তিনটি অটো, লটারির বাক্স ও কয়েকজনকে আটক করে। পরে মেলা কমিটি খবর পেয়ে দ্রুত ছুটে যায় রাণীশংকৈল থানায়। লটারির টিকিট বিক্রী পুরোপুরি বন্ধ রাখার কথা বলে মুছলেকা দিয়ে আটকৃত ব্যক্তি ও যানবাহন ছাড়িয়ে নিয়ে আসে। তাঁর পরেও পুলিশ প্রশাসনকে ধোকা দিয়ে দেরধারছে চালাচ্ছে অবৈধ লটারি বাণিজ্য।

প্রশাসনের চোখ ফাকি দিয়ে পুনরায় প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা লুফে নিচ্ছে গ্রামের সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে। তবুও যেনো নিশ্চুপ জেলা প্রশাসন। কার্যত প্রদক্ষেপ নেই লটারি বাণিজ্য বন্ধের।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেইসবুক) লটারি বাণিজ্য বন্ধে নেটিজনদের পোস্টের কমেন্ট বক্সে জড়ালো মন্তব্য করতে দেখা গেছে। বেশিরভাগ মানুষ দাবি তুলেন লাটারির নামে জুয়া বাণিজ্য বন্ধের।

পীরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা আলী আকবর, শরিফুল ইসলাম, আব্দুর রহমানসহ বেশকয়েকজন বলেন, নাম দেয়া হয়েছে হস্ত ও কুটির শিল্প মেলা। কিন্তু এর আড়ালে সাধারণ মানুষের উপার্জিত টাকা লুফে নিচ্ছে। চটকদার পুরস্কারের কথা বলে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডোগায় এমন জুয়া বাণিজ্য চললেও অজ্ঞাত কারণে দেখেও যেনো দেখছেন না। আগামী বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরিক্ষা। পরীক্ষার্থীরা লটারির বিক্রীর মাইকিংয়ে অতিষ্ঠ। এমনিতে মানুষের আয় রোজগার কম।

স্থানীয়রা জানান, চটকদার এসব বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে মোটরসাইকেল, সাইকেল, টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন রকম পুরস্কার পাওয়ার আশায় গ্রামের নিরীহ নারী পুরুষ প্রতিদিনই এই লটারি কিনছেন।

জহির জানান, পরিবারসহ মেলায় এসে যাদু দেখতে পরিবারের ৮ জন সদস্য টিকিট কেটে ভিতরে মেয়েদের অশ্লীল নাচ দেখে দ্রুত বের হয়ে আসছি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এসব অশ্লিল নৃত্য দেখছে তরুণ ছেলেরা। যেটার জন্য সমাজের মানুষের নৈতিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে।

বাদল নামে আরেকজন বলেন, একদিকে মানুষের অভাব অনটন। অন্যদিকে দুই দিন পর এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। পীরগঞ্জ শহরের চতুর্দিকে উচ্চ শব্দে মাইক বাজানো হচ্ছে। যেটি পরীক্ষার্থীদের জন্য খুবই অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ বিষয়ে পীরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি জয়নাল আবেদীন বাবুল জানান, মেলার নাম করে লটারি বাণিজ্য হচ্ছে। সেই সাথে প্রবেশ টিকিটের সাথে লটারির টিকিট বিক্রী কোনভাবেই কাম্য নয়। আয়োজক কমিটিকে বলা হয়েছে মেলা চলতে পারে লটারি যেনো না চলে। বিরোধীতা করা হয়েছে শুরু থেকেই তারপরেও লটারি বিক্রি হচ্ছে এটা ঠিক হচ্ছে না।

আর পীরগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রকিবুল হাসান ও থানার ওসি তাজুল ইসলাম জানান, মেলা কমিটি অবগত করেছিল মেলার প্রবেশ টিকিটগুলো লটারি করে পুরস্কার দিবে মেলায় ঘুরতে আসা মানুষকে। আলাদা করে লটারি টিকিট বিক্রি করছে তা অজানা। বিষয়টি খুতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান উপজেলা প্রশাসনের এই দুই কর্মকর্তা।