রুহিয়া (ঠাকুরগাঁও) সংবাদদাতা।। তিনি সবই খান। বালু থেকে মাটি সবই খান তিনি। পতিত ক্ষমতাসীন দলের আমলেও খেয়েছেন, এখনো তিনিই খান। নাম আব্দুর গফুর (ট্রলি)। স্থানীয়রা তাকে বালুখেকো গফুর নামে ডাকেন। কয়েকবছর ধরে এ কাজে তার সঙ্গে দুই ছেলে মামুন ও সাগর যোগ দিয়েছেন।
ঠাকুরগাঁও সদরের রাজাগাঁও ইউনিয়নের উত্তর বঠিনা এলাকার আব্দুর গফুর ও তার ছেলেদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বালু বিক্রি করে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, এমন অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়রা জানান, পতিত ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতা ব্যবহার করে রুহিয়া-পাটিয়াতাঙ্গী সড়কের সংয়োগ সেতুর দুই পাশের প্রায় চার কিলোমিটার নদী থেকে ১৫ বছর ধরে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করছেন গফুর।
রাজাগাঁও ইউনিয়ন এলাকায় টাঙ্গন নদীর পুহাতু দাদার ঘাট থেকে মামুন ও টাঙ্গন ব্যারেজ বালুর ঘাট থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করছে সাগর।
বাবা-ছেলের এমন কাজে ওই এলাকার বাসিন্দারা নানা ভোগান্তি পোহালেও প্রতিবাদ করতে পারছেন না।
স্থানীয় বাসিন্দা এনায়েত হোসেন জানান, বাবা-ছেলের অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু বিক্রির কারণে এলাকায় অনেকের জমি খালে বিলীন হয়েছে। ট্রাক্টরে বালু নিয়ে যাওয়ায় রাস্তার অবস্থাও বেহাল।
ষাট উর্ধ্ব বয়সী জয়নাল আবেদীন বলেন, টাঙ্গন নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাতো গফুর। তার ভাই গনি মিয়া এখনো নদীতে মাছ ধরে। তবে, আলাউদ্দিনের চেরাগ পেয়েছেন গফুর। সাবেক ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় অবৈধভাবে নদীর বালু বিক্রি করে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা গফুর বনে গেছেন কোটিপতি। তার রয়েছে মাটি কাটার দুইটি ভেপু, পাচটি ট্রাক্টর। যার বাজার মূল্য এককোটি টাকা। বাজারে মার্কেট তৈরির জন্য জায়গা, আবাদি জমিসহ এলাকায় একাধিক বাড়িসহ একাধিক গাড়িও রয়েছে তার।
পাশের জমির মালিক সায়েদ আলী বলেন, নদী থেকে বালু লুট করার ফলে ফসলি জমি ভেঙে যাচ্ছে। অচিরেই বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। আমরা এর প্রতিকার চাই।
স্থানীয় ইলিয়াস আলী, হাফেজ উদ্দিন, রমিজ উদ্দিনের কাছে বাৎসরিক চুক্তিতে নদী থেকে বালু তোলার রাস্তা ব্যাবহারের জন্যে ভাড়া নিয়েছে মামুন।
জমির মালিক রমিজউদ্দীন বলেন, গতবছর আব্দুর গফুর আমাদের ঘাট থেকে বালু তুলতো। এবছর তার ছেলে মামুন বালু তুলছে। আমার জমির উপর দিয়ে নদী থেকে বালু তোলার জন্যে প্রতিবছর দশ হাজার টাকা করে দেয় আমাকে।
ছেলে মামুন বলেন, টাঙ্গন নদীর পুহাতু দাদার ঘাট গতবছর তার বাবা গফুর নিয়েছিল। এবছর ঘাট তিনি নিয়েছেন।
কিভাবে কোটিপতি হলেন অভিযুক্ত আব্দুর গফুকে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছেন তিনি।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম বলেন, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক-মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা আবাসিক এলাকা থেকে সর্বনিম্ন এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু তোলা যাবে না।
এ ছাড়া বালু বা মাটি উত্তোলন বা বিক্রির জন্য খননের ফলে কোনো নদীর তীর ভাঙনের শিকার হলেও বালু তোলা যাবে না। আইন অমান্যকারীকে দুই বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা হবে। অবৈধভাবে বালু তোলা বন্ধ করতে চলবে অভিযান।