নিজস্ব প্রতিবেদক।।পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার নিরাময় নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে পরীক্ষা ছাড়াই ভূয়া রিপোর্ট তৈরী করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী রোগীকে দেওয়া হয় চিকিৎসা। এতে ওই রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন।
জানা যায়, বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের শমসের নগর গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর হোসেনের স্ত্রী ময়না বেগম (৫০) ডায়াবেটিস ও তলপেট ব্যথা নিয়ে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার নিরাময় নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসকের কাছে যান। চিকিৎসক ময়নাকে কয়েকটি পরীক্ষা করতে বলেন। তার মধ্যে একটি পরীক্ষার রিপোর্ট ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টার হতে দিনাজপুরের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে তিন দিনের মধ্যে করে এনে দেওয়া কথা। তিনদিন পরে সেই রিপোর্টিও দেওয়া হয়। পরে সেই রিপোর্টি নিয়ে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লুৎফুর কবিরের কাছে গেলে তিনি প্রেসক্রিপশনে ওষুধ লিখে দেন। ওষুধ খাওয়ার পরে ময়না আরও বেশী অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ঠাকুরগাঁওয়ে স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. আইরিস রহমানের কাছে যান। সেখানে গেলে তিনিও কয়েকটি পরীক্ষা দেন। এসময় তাকে নিরাময় নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্টি দেখালে তিনি রিপোর্টটি ভূয়া ধরতে পারেন। এসময় সেখানে আবার পরীক্ষা করলে রিপোর্ট দুইটার মাঝে কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায় নাই। পরে নিরাময় নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের টেকনিশিয়ান তুহিন পরীক্ষা ছাড়াই রিপোর্ট দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।
ময়না বেগম বলেন, ‘ডায়াবেটিস ও তলপেট ব্যথা নিয়ে নিরাময় নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাক্তারের কাছে যাই। এসময় ডাক্তার কয়েকটি পরীক্ষা দেয়। পরীক্ষা করে আবার ডাক্তারের কাছে যাই। তিনি রিপোর্ট দেখে প্রেসক্রিপশনে ওষুধ লিখে দেন। সেই ওষুধগুলো খেয়ে আমি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যাই। বিছানা থেকে উঠতে পারি না। পরে তাড়াতাড়ি করে আমার স্বামী ঠাকুরগাঁওয়ে অন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে শুনি আমাকে ভূল রিপোর্টি দিয়েছে।’
ময়নার স্বামী আলমগীর বলেন, নিরাময় নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আমাদের যে রিপোর্টটি দেওয়া হয়। সেখানে খামটা শুধু অরজিনাল দিয়েছে আর যে রিপোর্টটা দিয়েছে সেটা কম্পিউটার থেকে একটা সাদাকালো প্রিন্ট করে দিয়েছিলো। আমি তখন ওই টেকনিশিয়ানকে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে যেটা বাইরে থেকে আসে সেটা এরকম হয়। এই রিপোর্টটা করার জন্য আমার কাছ থেকে বারোশত টাকা নেয়। এখন আমার স্ত্রী খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমি এটার সঠিক বিচার চাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত টেকনিশিয়ান তুহিন পরীক্ষা ছাড়াই রিপোর্ট দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।
নিরাময় নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী উজ্জল বলেন, রোগী ময়না ও তার লোকজন আমার কাছে আসছিল, আমি টেকনিশিয়ান ও রোগীকে একত্রে করে কথা বলিয়ে দিয়েছি, তারা তাদের সিদ্ধান্ত নিবে।
বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুর কবির বলেন, এটা জালিয়াতি করে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা করবো।’