ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে চূড়ান্তভাবে ১৯ জন প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মেধা, শারীরিক যোগ্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে এ নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ। তবে এ নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম ও প্রক্সি দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। পুলিশ নিয়োগে ‘ভি’ চিহ্নের অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলে দ্রুত এ নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত চেয়েছেন শতাধিক চাকরি প্রত্যাশীও তাদের অভিভাবকরা।
আর নিয়োগ কমিটির পক্ষে থেকে বলা হয়েছে, ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগে কোন অনিয়ম হয়নি। স্বচ্ছতার মাধ্যমেই নিয়োগ সম্পূর্ণ হয়েছে। আর প্রক্সি দেয়ায় একজন আটকও করা হয়েছ।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সন্ধ্যায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ফলাফল ঘোষণা করা হয়। জেলা পুলিশের পুলিশ লাইন্সে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করেন ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার ও টিআরসি নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি শেখ জাহিদুল ইসলাম।
জানা যায়, সম্প্রতি পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কন্সটেবল পদে চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। ঠাকুরগাঁও থেকে ১৯ জনকে চাকরিতে যোগদান করানোর কথা রয়েছে। বৃহস্পতিবার পরিক্ষা শেষে সন্ধ্যা ৭টা দিকে ১৯ জনের নাম চূড়ান্তভাবে ঘোষণা করা হয়। আর ৪ জন ওয়েটিং লিস্টে আছে বলে জানান নিয়োগ কমিটি।
নিয়োগ কমিটিতে আরও ছিলেন, পঞ্চগড় (দেবীগঞ্জ সার্কেল) সহকারী পুলিশ সুপার সামুয়েল সাংমা ও লালমনিরহাট অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোঃ শাহাদত হোসেন সুমা।
অন্যদিকে, পুলিশ নিয়োগ পরিক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে দলবেধে অভিভাবকরা পুলিশ লাইনের মূল ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান। সবার চোখে মুখে রাগ, ক্ষোভ আর হতাশা। সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়েই এগিয়ে আসেন চাকরি প্রত্যাশীরা। তারা জানান, যারা অযোগ্য মাঠ থেকে বাদ পড়েছে তারাই লিখিত পরিক্ষায় ডাক পেয়েছে। পরিক্ষায় কয়েকজনকে শিখিয়েও দেয়া হয়। এবং অন্যজনের হয়েও একজন পরিক্ষা দিচ্ছিল বলে তারা অভিযোগ করেন। তাদের দাবি পুলিশের পক্ষে থেকে নিয়োগ স্বচ্ছতার কথা বলা হলেও বাস্তাব চিত্র ভিন্ন। পুলিশের বিরুদ্ধে কথা বললে কাল আমাদের বাড়ি থেকে তুলে এনে গুম করে দিতে পারে। তবে পুলিশ নিয়োগ পরিক্ষায় এসে একটা অভিজ্ঞতা হলো যোগ্যতা ও পরিশ্রম করলে চাকুরী হবে এটা সত্য নয়, সঙ্গে অন্যকিছুও থাকতে হয়।
কয়েকজন অভিভাবক বলেন, অনেক আশা নিয়ে ছেলেকে পুলিশে যোগদান করাবো ভেবেছিলাম। কিন্তু এখন আমার স্বপ্নের নাম শুধুই হতাশা। যেদিন মাঠে দৌড় ছিলো সেদিন আমার ছেলে বলেছিলো মা আমরা যারা ভালো দৌড়েছি তাদের অনেককে বাদ দেয়া হয়েছে। যাদের গেম প্যান্টে ‘ভি’ চিহ্ন ছিলো তারা এত খারাপ দৌড়েও তাদের ধরা হয়েছে। আমরা প্রতিবাদ করেও কাজ হয়নি। আমি পুলিশ লাইনে এসেছি চাকরি প্রত্যাশীদের থেকে শুনতে। এখন এ কথা অনেকেই বলছে। যাদের চিহ্ন দিয়ে রাখা হয়েছে তাদের নাকি পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। আমার ছেলের চাকরি বড় কথা নয়, প্রশ্ন এখন চাকরির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার।
এসব অভিযোগের তথ্য যাচাই করতে গণমাধ্যমকর্মীরা পুলিশ লাইনের ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে গেইট বন্ধ করে দেয় পুলিশ। ভিডিও করতেও বাধা দেন এবং সংবাদকর্মীদের দূরে অবস্থান করতে বলেন তারা। এসময় এক-দুজন করে পুলিশ লাইনের বের হতে থাকেন পরীক্ষার্থীরা। অনেকে সাংবাদিকের সঙ্গে ‘ভি’ চিহ্নের ব্যপারে কথা বললেও অনেকে এড়িয়ে গেছেন ক্যামরায়।
হরিপুর উপজেলা থেকে মৌখিক পরীক্ষা দিতে এসেছেন চাকরি প্রত্যাশী আরিফ। বের হয়ে সাংবাদিকদের সামনে বললেন, আমি হতাশ!
হতাশার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার চাকরি হবে কিনা জানিনা। তবে যেদিন আমার মাঠ হয়। সেদিন যারা ভালো দৌড়াতে পারেনি তাদের মধ্যে প্যান্টে ‘ভি চিহ্ন’ দেয়া ২৬ জনের মতো ছেলেকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। আমরা প্রতিবাদ করে ছিলাম। পুলিশ বলেছিল তারা বাদ পড়বে। কিন্তু এখন দেখছি তারা ভেতরে পরীক্ষা দিচ্ছে। এটা স্পষ্টত অস্বচ্ছতা! তাই আমি হতাশ।
এমন হতাশার অভিযোগ আরেক চাকরি প্রত্যাশী বলেন, আমরা তো এমন বাংলাদেশের জন্য জুলাই অভ্যুত্থান করিনি। যারা ফিটনেস টেস্টেই বাদ পড়েছে তারা পরীক্ষায় কিভাবে আসে? ভেতরে আজও প্রতিবাদ করেছিলাম আমাকে পুলিশের বড় বড় কর্মকর্তারা ধমক দিয়ে বসিয়ে দিয়েছে। এ নিয়োগ দ্রুত স্থগিত করা হোক। এ ঘটনার তদন্ত করা হউক।
সাংবাদিকদের ক্যামরায় বন্দি আরেক পরীক্ষার্থী তাকে সন্দেহ করা হলো। তিনি ভি চিহ্নের আওতায় কি না? পরীক্ষা কেমন হলো? এ সময় তার সাথে থাকা তার অভিভাবক তাকে কথা বলতে নিষেধ করেন এবং ক্যামরা দেখে পালিয়ে যান।
আরেক পরীক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, লিখিত পরীক্ষার দিনে একজনের পরীক্ষা আরেকজন দিচ্ছে। প্রতিবাদ করলাম এখন আমার পায়ে পড়তেছে। অথচ পুলিশ কিছুই বলছে না৷ এ নিয়োগ স্থগিত করার দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ১৯ জনে চূড়ান্ত করা হয়েছে। আরো ৪জন ওয়েটিংএ রয়েছে। ১৯ জনের মধ্যে যদি কেউ বাদ পড়ে সেক্ষত্রে ৪ জনের মধ্য থেকে নেয়া হবে। প্রক্সি দেওয়ার অভিযোগে একজনকে আটক করা হয়েছে। এর সাথে আরো কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নিয়োগ পরিক্ষায় অনিয়মের বিষয়ে প্রশ্ন করলে এসপি বলেন, যারা রিটেন পরিক্ষা ভালো করতে পারেনি তারা অভিযোগ করবে এটাই স্বাভাবিক। যদি অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে তারা আমাদের জানালো না কেন? আমরা ব্যবস্থা নিতাম। তবে আমরা যদি অভিযোগ পাই তাহলে তদন্ত করে দেখবো।
তিনি আরও বলেন, ১২০ টাকায় চাকুরী এটা আসলে আমি বলতে চাই না। ১২০ টাকা। তার গাড়িভাড়া আছে, অফিশিয়াল ফি আছে, অনেক খরচ আছে এসব বলে লাভ নাই। যার যে নিয়ম অনুযায়ী হওয়ার কথা তার সে সেভাবে হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।