সটাফ রিপোর্টার।। নরসিংদী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী নাজির ইকরাম হোসেনের (৪২) বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন এক নারী। অভিযোগকারী নারী দাবি করেন, চাকরির সূত্রে পরিচয়ের পর বিয়ের প্রলোভনে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়েছে।
সোমবার (২৩ জুন) নরসিংদী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দায়ের করা হয়। আদালতের বিচারক মো. আলী আহসান মাধবদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কে মামলাটি রুজু করার নির্দেশ দেন।
অভিযোগে বলা হয়, বাদীর পক্ষাঘাতগ্রস্ত মুক্তিযোদ্ধা বাবার জন্য একটি হুইল চেয়ারের আবেদন করতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গেলে সেখান থেকেই সহকারী নাজির ইকরাম হোসেন তার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করেন এবং যোগাযোগ শুরু করেন। কিছুদিনের আলাপের পর তিনি বিয়ের প্রস্তাব দেন। এরপর ৯ মার্চ মাধবদী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন গাজী আবাসিক হোটেলে নিয়ে গিয়ে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ করেন বাদী।
এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, বিয়ের আশ্বাস দিয়ে বিভিন্ন সময় তার কাছ থেকে নগদ দুই লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেন। কিন্তু ০৬ জুন ইকরাম বিয়েতে অস্বীকৃতি জানান।
তবে মামলার পর বিষয়টি ঘিরে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মামলার বাদী নারী এর আগেও একাধিকবার কয়েকজনকে ( পলাশ সারকারখানা মিলের সামনের এক ব্যবসায়ী, মাধবদীর একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, নরসিংদী বাজীর মোড়ের প্রেস মালিকসহ আরো কয়েকজন) বিয়ের ফাঁদে ফেলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এমনি টাকার জন্য সে তার সঙ্গীয় কিছু প্রতারকের সহযোগিতায় পূর্বের স্বামীর শিশু ছেলেকে অপহরণ করেছেন। অত:পর পুলিশি সহযোগিতায় সে ছেলেকে উদ্ধার করা হয় এবং তার নামে মামলা রজ্জু করা হয় যা নরসিংদী সদর মডেল থানার মামলা নম্বর ২৮, তারিখ:২০/১০/২০১৬ ধারা: ৩৬৫/৩৮৫/১১৪/৫০৬। এছাড়াও তার পূর্ববর্তী সংসারে তার দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তার বিরুদ্ধে অপহরণসহ একাধিক মামলা ছিল এবং জেলও খেটেছেন বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।
তার এ স্বভাবসুলভ আচরণ চরিতার্থ করার জন্য সে পর্যন্ত ইকরাম হোসেন, সহকারী নাজিরকে শিকারী হিসেবে বেঁচে নেয়। দুইজনই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে করুণাবশত হুইল চেয়ার পাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদনপত্র লিখে দেয়ার অনুরোধ জানালে ইকরাম দয়াবশত আবেদন লিখে দেয়। সে সুবাদে তার কাছ থেকে মোবাইল নম্বরটি চেয়ে নিয়ে তারপর সুকৌশলে সহজ সরল ইকরামকে দিন দিন ফোন দিয়ে মিশতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাব দেয় এবং বিভিন্ন অজুহাতে বিভিন্ন সময় অনেক টাকা হাতিয়ে নেয়। ইতোমধ্যে তার সম্মন্ধে ইকরামের কাছে বিভিন্ন মহল হতে আর আসল চরিত্রের খবর আসতে থাকে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে তার ঘনিষ্টতা ও অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে মর্মে শুনা যায়। ফলে ইকরাম তার ফোন থেকে দুরে সরতে শুরু করলে তাকে বিভিন্ন প্রকার হুমকি দেয় ফলে ইকরাম নরসিংদী মডেল থানায় ২৬/২/২০২৫ তারিখ বাদীনির বিরুদ্ধে এক জিডি করেন (জিডি নং ১৪৯৭ (কপি সংযুক্ত ) অত:পর সে তাকে জোরপূর্বক বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। ইকরাম অস্বীকার করলে বিরুদ্ধে ছবি এডিট করে প্রতারণার মাধ্যমে ফাদেঁ ফেলে টাকা আদায়ের জন্য হোটেলে নিয়ে ধর্ষনের অভিযোগ তুলেন। যা যড়যন্ত্রমূলক, মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন মর্মে স্থানীয় লোকজনের নিকট হতে শুনা যায়। এ বিষয়ে হোটেলে খোঁজ নিয়ে জানা যায় মামলায় উল্লিখিত তারিখসহ পুরো রমজানে আবাসিক হোটেল বন্ধ ছিল এবংহোটেলের বোর্টার রেজিস্টারে এ তারিখে উক্ত নামের কোন তথ্য নেই মর্মে সংশ্লিষ্ট সূত্র হতে জানা যায়।
এই প্রেক্ষিতে অনেকেই দাবি করছেন, একজন সরল সরকারি কর্মকর্তাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হচ্ছে। তাদের ভাষ্য, সহকারী নাজির ইকরাম হোসেন দীর্ঘদিন ধরে নিষ্কলুষ সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন, তাকে টার্গেট করে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে।
মাধবদী থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, “আমরা এখনও আদালতের আদেশ হাতে পাইনি। আদেশ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে সহকারী নাজির ইকরাম হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তার সহকর্মীরা বলছেন, তিনি নির্দোষ এবং এই মামলাটি সম্পূর্ণ পরিকল্পিত।