হুসাইন মো:আরমান(রুহিয়া থানা প্রতিনিধি)হ্যাঁ, “প্রিয় শিক্ষক, হাজার ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগর”। শিক্ষক হলেন সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, যিনি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গঠন করেন এবং তাদের জীবনে আলোকবর্তিকা হয়ে পথ দেখান। শিক্ষকরা শুধু পাঠ্যবইয়ের জ্ঞানই দেন না, বরং শিক্ষার্থীদের নৈতিক, সামাজিক ও মানসিক বিকাশেও সহায়তা করেন। তাই, শিক্ষককে “মানুষ গড়ার কারিগর” বলা হয়।
ঠাকুরগাঁও সদরের রুহিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের সেনিহাড়ী গ্রামের বাসিন্দা বদরুল ইসলাম (ইংলিশ শিক্ষক) ছাত্রছাত্রীরা তাকে এসিস্ট্যান্ট হেড স্যার নামেই চিনেন। বয়স ৮০ পার হলেও তাঁর চলার গতি থেমে যায়নি এক মুহূর্তও। জীবনের দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন চক আর ব্ল্যাকবোর্ড-এর পাশে দাঁড়িয়ে। তার হাত দিয়েই তৈরি হয়েছে লক্ষাধিক ছাত্রের ভবিষ্যৎ।
রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে এখন তিনি পরিচিত এক ‘আলোকিত প্রবীণ’ হিসেবে।
আজও প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সাইকেল নিয়ে বের হন, কখনো বাজারে, কখনো কারো বাসায় খোঁজখবর নিতে, আবার কখনো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে।
পঞ্চাশের দশকে শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন বদরুল ইসলাম। রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে এসিস্ট্যান্ট প্রধান শিক্ষক হিসেবে তিনি ছিলেন দায়িত্বশীল, প্রজ্ঞাবান ও অনুপ্রেরণামূলক এক ব্যক্তিত্ব। তাঁর ক্লাসে শিক্ষার্থীরা শুধু পাঠ্যবই নয়, শিখেছে শৃঙ্খলা, সততা আর দায়িত্ববোধ।
অভিভাবক বাবুল আক্তার ও সোহরাব আলী বলতেন, “আমার সন্তান যদি বদরুল স্যারের মতো মানুষ হতে পারে, তবে তার শিক্ষাজীবন সফল।”
বদরুল ইসলামের পরিবারে রয়েছে দুই কন্যা সন্তান। সন্তানদের উচ্চশিক্ষিত ও মানবিক করে তোলাই ছিল তাঁর অন্যতম জীবনলক্ষ্য। পরিবার তাঁর কাছে ছিল শুধুই রক্তের সম্পর্ক নয়। ছিল নৈতিক শিক্ষার প্রতিফলন। তাঁর মেয়েরা বাবার আদর্শ ধারণ করে সমাজে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত।
এই বয়সেও তিনি প্রতিদিন সাইকেল চালান। এলাকা ঘুরে ঘুরে সমাজের খোঁজখবর নেন, কখনো কারো সন্তানকে পড়তে উৎসাহ দেন, আবার কখনো হাসিমুখে দরজায় গিয়ে বলেন, “ভালো আছো তো?” তাঁর সাইকেল যেন শুধু যানবাহন নয়। এটি তাঁর কর্মস্পৃহার প্রতীক।
শিক্ষকতা থেকে অবসর নেওয়ার পরও থেমে যাননি। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের পাশে এখনো নিঃস্বার্থভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। দরিদ্র কোনো পরিবারের সন্তান স্কুলে যেতে না পারলে সেটা যেন তাঁর নিজের ব্যথা হয়ে দাঁড়ায়।
তিনি বলেন, শিক্ষকের হওয়া উচিত দায়িত্বশীল, আমি দায়িত্বশীল থেকে পেছনে ছিলাম না। “আমি যতদিন বাঁচবো, চেষ্টা করবো মানুষের পাশে থাকতে। শিক্ষকতা তো শুধু ক্লাসরুমেই হয় না।”
বদরুল ইসলাম একজন শিক্ষক, একজন অভিভাবক, একজন সমাজদরদী মানুষ। সেনিহাড়ী গ্রামের এই আলোকিত মানুষটির জীবন, আমাদের শেখায়। সত্যিকারের শিক্ষক কখনোই অবসর নেন না। চক- ডাস্টার ফেলে দিলেও জীবনের ক্লাসরুমে তাঁর পাঠদান থেমে নেই। লক্ষাধিক ছাত্র ছাত্রীর ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, সম্মানের প্রিয় নাম রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের- এসিস্ট্যান্ট হেড স্যার।
৮০ বছর বয়সে সাইকেলের প্যাডেলে ভর করে তিনি যেন সমাজের বুকে আঁকছেন এক একটি শিক্ষা ও ভালোবাসার দৃষ্টান্ত।