স্টাফ রিপোর্টার।। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় একদিন পর আবার নিম্নমুখী তাপমাত্রা। ঘন কুয়াশা ঢেকে রেখে আছে গোটা জেলা। কুয়াশার সাথে হিমশীতল বাতাসে ঝরছে বরফের শীত। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা যায়নি।
মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারী) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভোর ৬টায় একই তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। সোমবার রেকর্ড হয়েছিল ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গতকালের চেয়ে ২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমেছে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, রবিবার (৭ জানুয়ারি) ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি, শনিবার (৬ জানুয়ারি) ৯ দশমিক ৭, শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) ৮ দশমিক ৪, বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) ৮ দশমিক ৫, বুধবার (৩ জানুয়ারি) ৭ দশমিক ৪, মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) ১০ দশমিক ৭ ও সোমবার (১ জানুয়ারি) ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে জেলার পরিবেশ। কুয়াশার কারণে শহর ও গ্রামের সড়কগুলোতে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে দেখা গেছে। ঘন কুয়াশার সাথে ঝরছে হিমশীতল শিশির। শীতের কারণে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের পেশাজীবিরা। ভ্যান চালক, পাথর ও চা শ্রমিক, দিনমজুর থেকে নানান শ্রমজীবী মানুষ। কমে গেছে তাদের দৈনন্দিন রোজগার। পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছেন তারা। প্রয়োজন ছাড়াও অনেকে ঘর থেকে বের না হলেও জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করেই শীত উপেক্ষা করেই কাজে বেড়িয়েছেন নিম্ন আয়ের পেশাজীবিরা।
স্থানীয়রা জানান, গতকালের চেয়ে আজ প্রচন্ড ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশা। দুদিন ধরে ভোরে দেখা মিলছে না সূর্য। সোমবার দিনভর কুয়াশায় ঢাকা ছিল জেলার পরিবেশ। আজ ঠান্ডা বাতাসের কারণে শীত লাগছে। তবে বেশি ঠান্ডা শুরু হয় সন্ধ্যার পর থেকে। রাত যত বাড়ে ততোই রাত বরফ হয়ে উঠে। সারারাত কুয়াশার সঙ্গে শিশির বৃষ্টি ঝরে। শিশিরও বরফের মতো ঠান্ডা। ঠান্ডায় হাত-পা অবশ হয়ে আসে।
গ্রামীণ নারীরা জানান, সকালে কনকনে শীতের কারণে কাজ করতে গিয়ে হাত-পা অবশ হয়ে আসে। ঘরের আসবাবপত্র, বিছানাপত্র, ঘরের মেঝে পর্যন্ত স্পর্শ করলে বরফের মতো ঠান্ডা মনে হয়। ফলে আমাদের মতো নারীদের সকালে কাজ করতে খুব কষ্ট হয়।
চা চাষি মোজাম্মেল জানান, খুব ঠান্ডা বারে। হাত-পা অবশ হয়ে অসছে। কিন্তু কি করিম, পেটের ক্ষুধা ঠান্ডা বুঝে না। তাই ভোর-সকালত কাজত বের হইছু-এভাবেই বলছিলেন মোজাম্মেল হোসেন নামের চা চাষি। একই কথা বলেন ভ্যান চালক হাসমত আলীও।
ফেরদৌসি আক্তার, মার্জিয়া ও সুমন রানাসহ শিক্ষার্থীরা জানান, আজ খুব ঘন কুয়াশা। তার সাথে শিশির পড়ছে। প্রচন্ড ঠান্ডা লাগছে। প্রাইভেটে যাচ্ছি। বিশেষ করে রাতে ও ভোরে উঠে পড়ালেখা করতে খুব কষ্ট হয় ঠান্ডার কারণে।
ভ্যান চালক হাসমত আলী জানায়, প্রচন্ড কুয়াশার মধ্যেই জীবিকার কারণে ভ্যান নিয়ে বেড়িয়েছি। ঠান্ডা বাতাসের কারণে ভ্যান চালাতে গেলে হাতপা অবশ হয়ে আসে। আর কুয়াশার কারণে ভ্যানেও চড়তে চায় না কেউ। তাই কামাই কম, রোজগার তেমন ভালো হচ্ছে।
এদিকে শীতের কারণে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু থেকে বয়স্ক মানুষ। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর আউটডোরে ঠান্ডাজনিত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসার পাশাপাশি শীতজনিত রোগ থেকে নিরাময় থাকতে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছেন চিকিৎসকরা।
জেলার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ জানান, গতকালের চেয়ে ২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমেছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সোমবার রেকর্ড হয়েছিল ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। ভোর থেকে সূর্য ঢাকা রয়েছে। হিমেল বাতাস বইছে। বিশেষ করে শীত বেশি লাগার কারণ হচ্ছে বায়ুর গতি বেগ। উত্তর-পূর্ব বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে যে বায়ু প্রবাহিত হয়, সেটি শীতকালের। বাতাসের গতি বেগ বেশি হলে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। সে অনুপাতে এ অঞ্চলে এখন শীতের তীব্রতা বেশি হচ্ছে। আর দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকায় ২৬-২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রেকর্ড হচ্ছে। #