1. info@www.dailyzhornews.com : দৈনিক ঝড় :
রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ১২:৫৪ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
রায়পুরা আতস আলী বাজারে জেলা পরিষদের সদস্য রাজিব আহমেদ জমি জবর দখলের চেষ্টা অভিযোগ আলী আসগর মোল্লা বিরুদ্ধে গাইবান্ধায় সুরবানী সংসদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন পঞ্চগড়ে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে বাড়ি ঘর ভাংচুর ও লুটপাটের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসকে ধ্বংস করেছে কেয়ারটেকার সরকারকে যখন নিষিদ্ধ করা হয় পঞ্চগড়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান অর্থের অভাবে চিকিৎসার খরচ চালাতে পারছে না সাংবাদিক মাসুদ ঘোড়াশালে ট্রাকের চাপায় যুবক নিহত, চালক আটক প্রত্যন্ত অঞ্চলে আবু তালেবের মানুষ গড়ার কারখানা  আর্থিক সাহায্য প্রদান করে, টুম্পাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিতে আকুল আবেদন পলাশবাড়ীতে স্বেচ্ছাসেবক দলের যৌথ প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীর বাড়িতে আগুন দেওয়ার পরিকল্পনা: কৃষক লীগ নেতার অডিও ফাঁস

পঞ্চগপরড়ের তেঁতুলিয়ায় ড্রেজারের  ট্রাক্টরে পাথর উত্তোলনে হারিয়ে যাচ্ছে ডাহুক

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ১২৪ বার পড়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার।। বিধি নিষেধ অমান্য করেই নির্বিচারে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ডাহুক নদীতে চলছে পাথর উত্তোলন। এতে করে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এ নদীটি। গতিপথ হারিয়ে ক্রমাগতভাবে হারাচ্ছে চিরচেনা রূপ। এক সময় অত্যাধুনিক ড্রেজার মেশিনের পাথর তোলার কারণে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ে এ নদীটি। ড্রেজারের পর এখন অভিনব পদ্ধতিতে ট্রাক দিয়ে তোলা হচ্ছে নদীর বুক চিরে পাথর। পাথর খেকোদের অত্যাচারে হারিয়ে যেতে বসেছে ডাহুক নদী।

ভারত থেকে উৎপত্তি হয়ে শালবাহান ইউনিয়নের রৌওশনপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে দুটি ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে ১৪ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে ফের ভারতে ঢুকে গেছে ডাহুক। এর পশ্চিমে শালবাহান ইউনিয়ন ও পূর্বে রয়েছে বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন। দুটি ইউনিয়নের নদী ও নদীর ধারে কাছে রয়েছে হাজার হাজার একর কৃষি জমি। চা বাগান থেকে শুরু করে আমসহ নানা ফসলের বাগান।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, লোহাকাচি-বালাবাড়ী ডাহুকের বুক চিরে ট্রাক্টর দিয়ে পাথর উত্তোলন করছেন শ্রমিকরা। একটি ট্রাক্টর দিয়ে পাথর তুলতে ৮-১০জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়। তাদের দুজন সাইটের মাঝখানে পানিতে ডুবে বেধা দিয়ে টেনে আসে। পরে সে পাথর চালনার কাজ করে আরো কয়েকজন। এভাবেই ডাহুক নদীর শালবাহান মাঝিপাড়া, কালিতলা, লোহাকাচী, বালাবাড়ী, বুড়াবুড়ির কাটাপাড়া, সরকারপাড়া ও হারাদীঘি এলাকায় নদীতে পাওয়ার ট্রাক্টর দিয়ে পাথর তোলার দৃশ্য চোখে পড়ে। এজন্য কয়েকজন জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী ও থানার নামে তুলছেন টাকা। যদিও সবাই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ডাহুক নদীতে প্রতিদিন নির্বিচারে তোলা হচ্ছে পাথর। ড্রেজার মেশিনের সময় থেকেই নদীটি ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। এখন ড্রেজার মেশিনের পর অভিনব পদ্ধতি হিসেবে ট্রাক্টরের ইঞ্জিনের সাহায্যে নদীর গভীর থেকে তোলা হচ্ছে হাজার হাজার সিএফটি পাথর। নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাক্টর দিয়ে তোলা হচ্ছে পাথর। রয়েছে ৮০ থেকে ১০০টি সাইট। এসব সাইট নিয়ন্ত্রণ করে পাথর তুলছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। জড়িত রয়েছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিও।
তারা আরও জানান, ডাহুক নদীতে চাষাবাদে রয়েছে ব্যাপক অবদান। বর্ষাকালে পলি মিশ্রিত পানি ছড়িয়ে দেয় এই নদ। শুস্ক মৌসুমে ডাহুকের প্রবাহিত পানি চাষাবাদের জমিকে উর্বর করে। ডাহুকে রয়েছে নানা প্রজাতির মাছ। সারা বছর ডাহুকে অন্তত: ১৪ থেকে ১৫ টন মাছ আহরন করে দুই ইউনিয়নের শতাধিক জেলে। এলাকার হাজার হাজার মানুষের আমিষের চাহিদা মেটায় এই মাছ। ক্রমাগত পাথর উত্তোলনের কারণে নদী হারাচ্ছে গতিপথ, হারাচ্ছে নিজের চিরচেনা রূপ। চরম অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এই ডাহুক।
কারা কারা এসব সাইট চালাচ্ছেন এমন প্রশ্ন করলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু শ্রমিক জানান, আমরা শুধু পাথর তোলার কাজ করি। এসব সাইট চালানোর মহাজন রয়েছে। যেমন-শালবাহান উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের আগা শালবাহানের আনিছুর, সানু বালাবাড়ী এলাকার আবু, আহাদ, জুয়েল, জাকের, কুমিল্লার পাথর ব্যবসায়ী পলাশ ও বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের মান্দুলপাড়া এলাকার মনছুরগং, বন্দিভিটা গ্রামের মোতালেব ওরফে মোতা, সর্দারগছ এলাকার জিয়ারুল, আলমগীর ও আহসান ও লোহাকাচী গ্রামের আব্দুল জলিল। এদের মধ্যে পলাশ সাইট নিয়ন্ত্রণ করেন বলে জানিয়েছে নাম প্রকাশ করা সত্ত্বে পাথর শ্রমিকরা।
‘আরেকজন আব্দুল জলিল। তিনি সিন্ডিকেট ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করার নামে প্রত্যেক পাথর সাইড থেকে হাজার হাজার টাকা নিচ্ছেন বলে জানা যায়। সে টাকা সিন্ডিকেটের বিভিন্ন সদস্যের হাতে পৌছে দিচ্ছেন তিনি। কয়েকদিন আগে তেঁতুলিয়া চৌরাস্তা বাজারে একটি বিকাশের দোকান থেকে ম্যানেজ করার নামে টাকা পাঠাতে দেখা যায় আব্দুল জলিলকে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আব্দুল জলিল জানান, আমি কোন চাঁদা নেইনা। মালিকানা জমিতে পাথর উত্তোলন করছি।
পলাশের বাড়ি কুমিল্লায়। এর আগে এক পুলিশ সুপারের বাড়ি ছিল কুমিল্লায় সেই সুবাদে তখন ড্রেজার বা বোমা মেশিনে দেদারছে পাথর উত্তোলন নিয়ন্ত্রণ করতো এই পলাশ। ওই এসপি বদলি হয়ে নতুন এসপি যোগ দিলে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়।তিনি বদলী হয়ে বর্তমান এসপি যোগদানের পরও বেশ কিছুদিন পাথর উত্তোলন বন্ধ ছিল। নতুন করে ভিন্ন কৌশলে আবার শুরু হয়েছে পাথর উত্তোলন।
তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) গাড়ি চালক বসির ও পলাশ বিভিন্ন সাইড থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি, গণমাধ্যমকর্মী ও সংস্থার প্রধানদের জন্য টাকা উত্তোলন করছেন। মুঠোফোনে বিষয়টির ব্যাপারে বক্তব্য নিতে যোগাযোগ করা হলে পলাশ ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন কেটে দেন।
পাথর শ্রমিকরা বলছেন ডাহুকে হাজার হাজার শ্রমিক পাথর উত্তোলন করে নিজেদের সংসার চালাচ্ছেন। অন্যদিকে দেশের রাস্তাঘাট,ভবন নির্মাণে কাজে লাগছে এই পাথর। তবে তারা স্বীকার করছেন, অপরিকল্পিত ভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে ডাহুকের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পাথর শ্রমিকরা জানান, সাইট মালিকরা যেভাবে আমাদেরকে পাথর উত্তোলন তুলতে বলেন আমরা সেভাবেই তুলি।
পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের রাজস্ব শাখা হতে জানা যায়, গত ২০১৩ সালের মার্চ মাসের ১৪ তারিখের গেজেট প্রকাশের পর বাংলা ১৪২৬ সন হতে সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডাহুক নদীর পাথর মহাল ইজারা বন্ধ করা হয়েছে। অথচ সরকারি সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা না করে অসাধু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে শ্রমিক নামিয়ে পাথর উত্তোলন করেই চলছে। এতে করে সরকার যেমন হারাচ্ছেন রাজস্ব, তেমনি অপরিকল্পিতভাবে নির্বিচারে পাথর উত্তোলনের কারণে হারিয়ে যেতে বসে এ নদী।
শালবাহান ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম জানান, আমার কিছু ট্রাক্টর আছে। তা দিয়ে পাথর লোড-আনলোড হয় সত্য। তবে এ অঞ্চলের শতশত শ্রমিক সাধারণভাবে পাথর তুলে জীবিকা নির্বাহ করছে। এ পাথরের উপরেই তাদের জীবন জীবিকা।
পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) পঞ্চগড় আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম জুয়েল ডাহুক নদী থেকে ভিন্ন কৌশলে আবার পাথর তোলার খবর পেয়েছি। এভাবে পাথর উত্তোলন আইন বিরোধী ও অপরাধ। অবিলম্বে এভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।
তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুজয় কুমার রায় চালকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে। তারপরও বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি এ থানায় কিছুদিন হলো যোগদান করেছি। কোথায় পাথর উত্তোলন হচ্ছে তা নিয়ে খোজ নেয়া হচ্ছে। তবে ট্রাক্টর দিয়ে পাথর উত্তোলন কারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলে রাব্বি বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। যাতে কোনোভাবেই ডাহুক নদীতে এ ধরনের ট্রাক্টর দিয়ে কেউ পাথর তুলতে না পারে। এছাড়া এর আগেও ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে এবং তা চলমান আছে। #

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: বাংলাদেশ হোস্টিং