ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধিঃদেশের উত্তরে পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ে কাঁচা চা পাতার দর কমতে কমতে কেজি প্রতি ৭ টাকায় নেমেছে। এতে লোকসানে পড়ে ক্ষুব্ধ চা চাষিদের কেউ কেউ বাগান কেটে ফেলতে শুরু করেছেন। তারা চায়ের দর তলানিতে নামায় কারখানা মালিকদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালে পঞ্চগড়ে চা চাষের গোড়াপত্তন হওয়ার পর গত ২৩ বছরে জ্যামিতিক হারে তা সম্প্রসারিত হয়। একবার চা চাষ করে ৭০ থেকে ৮০ বছর সুফল পাওয়ার আশায় পঞ্চগড়সহ পার্শ্ববর্তী জেলার বিস্তৃর্ণ সমতল ভূমিতে দ্রুতই প্রসার লাভ করে চায়ের চাষ। বড় বাগান মালিকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে প্রান্তিক চাষিদের ক্ষুদ্রায়তনের চা বাগান সংখ্যা। জেলায় বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠে ২৬টি চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানা। শুরুর দিকে কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতা ৩৮ থেকে ৪২ টাকায় কিনে প্রান্তিক চাষিদের চা চাষে উদ্বুদ্ধ করলেও বাগান সম্প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই দর নানান অযুহাতে নেমে আসে। পঞ্চগড়ের উৎপাদিত চা শুরুতে দার্জিলিং ভ্যারাইটি হিসেবে কারখানাগুলো প্রচার করলেও এখন সেই একই চায়ের মান নিয়ে তারাই প্রশ্ন তুলে বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে।
পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ড সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে প্রতি কেজি কাঁচা চাপাতা ১৮ টাকা নির্ধারণ করে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত মূল্য নির্ধারণ কমিটি। কমিটির সিদ্ধান্ত ঠিক রেখে কারখানাগুলো চা কিনলেও কৌশলের আশ্রয় নিয়ে চাষিদের এক হাজার কেজি চাপাতা নিয়ে মূল্য পরিশোধ করছে ৫০০ থেকে ৬০০ কেজির। অবশিষ্ট পাতা ফ্রি হিসেবে দিতে বাধ্য হচ্ছে চাষিরা।
প্রায় ৬ একর জমিতে চা চাষ করে লোকসানে জর্জরিত ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নের চা চাষি আমিনুর রহমান রিপন বলেন আমি ২০০০ সালে প্রায় ৬ একর জমিতে অনেক আশা করে চায়ের বাগান করেছি শুরুতে পাতার দাম ছিল কিন্তু ধীরে ধীরে দাম কমতে কমতে এ বছর একদম তলানিতে এসে পরছে। তিনি বলেন বর্তমানে প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতা মাত্র ৭ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে এতে করে আমি প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন এই জন্য আমি সিদ্ধান্ত দিয়েছি বাগানের সব গাছ তুলতে বাধ্য হয়েছি।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষক ও চা চাষি মেহেদী আহসান উল্লাহ চৌধুরী বলেন আমিও প্রায় ২ একর জমিতে চা চাষ করেছি বর্তমানে চা পাতার দাম অনেক কম, তাই প্রান্তিক চা চাষিরা বিপদের মধ্যে রয়েছে। তিনি আরও বলেন আমিও চা বোর্ডের উর্ধতন কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আপনারা দেশের চা শিল্পের দিকে একটু নজর দিন নইলে চা শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ডের উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন বলেন, ‘চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানা কর্তৃপক্ষ নিজেদের খেয়াল-খুশিমতে চাষিদের কাছ থেকে চাপাতা কিনছেন এবং পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ের চা পাতার মানও একটু খারাপ এজন্যই দাম একটু কম হতে পারে । তিনি আরও বলেন চা চাষিদের প্রতি এমন অমানবিক আচরণের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে।’