পঞ্চগড় প্রতিনিধি।। পঞ্চগড়ে নজিরবিহীন নিরাপত্তায় আহমদীয়া মুসলিম জামাতের দুদিন ব্যাপী ৯৯ তম বার্ষিক সালানা জলসা পঞ্চগড় পৌর এলাকার আহমদনগরে আহমদীয়া কমপ্লেক্স চত্বরে মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে। এ জন্য প্রশাসন নজিরবিহীন নিরাপত্তায় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সর্বত্র সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শহরের মোড়ে মোড়ে, জলসাস্থলের আশেপাশে প্রচুর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। সাইরেন বাজিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়িবহর টহল দিচ্ছে। পঞ্চগড় শহর আহমদনগর জলসা স্থলের আশপাশের এলাকা এখন পুরো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।
জাতীয় সংগীতের মধ্যদিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সম্মিলিত দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন আহমদীয়া মুসলিম জামাত বাংলাদেশ ন্যাশনাল আমির মাওলানা আবুল খান চৌধুরী এবং সালানা জলসা অফিসার আহমদ তবশীর চৌধুরী। জলসার প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন আহমদীয়া মুসলিম জামাতের ন্যাশনাল আমীর মাওলানা আব্দুল আউয়াল খান চৌধুরী।
সর্বকালের এবং সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সা.) বিষয়ে বক্তব্য দেন মাওলানা শাহ মোহাম্মদ নুরুল আমীন। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আহমদীয়া খেলাফতের ভূমিকা নিয়ে বলেন, ড.আবদুল্লাহ শামস বিন তারিক, বর্তমান যুগে কুরআনের ভবিষ্যদ্বানীর পূর্ণতা এই বিষয়ে জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য দেন মোবাশশের উর রহমান, দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে আহমদী মুসলমানদের ভূমিকা অত্যন্ত জ্ঞানগবর্ভ বক্তব্য সালান জলসা অফিসার আহমদ তবশীর চৌধুরী খাতামান্নিবিয়্যিন এবং আহমদীয়া মুসলিম জামাত বিষয়ে বক্তব্য দেনরাখেন মাওলানা জহির আহমদ।
সালানা জলসা অফিসার আহমদ তবশীর চৌধুরী বিকালে জলসা মাঠে জলসা সর্ম্পকে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, “এ জলসার লক্ষ্য ও মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের জামাতের সদস্যগণ যেন এভাবে বার বার পরস্পর সাক্ষাতের মাধ্যমে নিজেদের মাঝে এমন এক পবিত্র পরিবর্তন সাধন করে যাতে তাদের হৃদয় সম্পূর্ণরূপে পরকালের দিকে ঝুঁকে যায়। আর তাদের ধর্মভীরুতা, তাকওয়া, খোদাভীতি, পরহেযগারী, সহানুভূতি, পারস্পরিক ভালবাসা ও ভ্রার্তৃত্ববোধে তারা যেন অন্যদের জন্য একটা আদর্শে পরিণত হয়। নম্রতা, বিনয় ও সততা যেন তাদের মাঝে সৃষ্টি হয়। আর ধর্মীয় উৎকর্ষের জন্য তারা যেন পরিশ্রমের রাস্তা বেছে নেয়”। আগামীকাল সমগ্র বিশ্বের শান্তি কামনা করে দোয়ার মাধ্যমে বুধবার অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।
তিনি প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আমাদের ধর্মকর্ম পালন করতে চাই। গতবছর জলসাকে কেন্দ্র করে আমাদের সম্প্রদায়ের নামে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করে আমাদের সম্প্রদায়ের শতাধিক দোকানপাট, বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে লুটপ্টা করে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছ। এতে আমাদের সম্প্রদায়ের একজনকে পিটিয়ে মেরেছে।
পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা বলেন, বাংলাদেশ পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব হলো নাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়া, শান্তি শৃঙ্খলা স্থাপন করা। সমস্ত নাগরিকের ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। এসব বিষয়ে সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব হচ্ছে পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর। এটা নিশ্চিত করার জন্য আমরা কাজ করছি। পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদার করেছি। সারা দেশ থেকে আসা পুলিশের ৪ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করছে। এর বাইরে বিজিবি ১৬ প্লাটুন, র‌্যাবের ১৬ টি টিমসহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে। আশা করি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে এই জলসা শেষ হবে।
গত কয়েক বছর ধরেই আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসা বন্ধ ও তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল ইসলাম ধর্মীয় বিভিন্ন সংগঠন। গত বছরের ২ থেকে ৪ মার্চ আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপর হামলা, তাদের দোকানপাট, ঘরবাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ আহত। ওই ঘটনায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের একজনসহ ২ জন নিহত হয়। ঘটনার পর ত্রিশেরও অধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১৫ হাজার জনকে আসামী করা হয়েছে। এবারও জলসা বন্ধের দাবিতে গত ২৮ জানুয়ারি সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ পরিষদ জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে। শুক্রবার ঢাকার বাইতুল মোকাররম মসজিদের সামনে বিক্ষোভ করে ইসলাম ধর্মীয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা জলসা বন্ধের দাবিতে রোড মার্চের হুশিয়ারি দেয়। #