1. info@www.dailyzhornews.com : দৈনিক ঝড় :
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ০২:৫৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
দূর হয়েছি ঘাড় নিচু করে  //   মোহাম্মদ মনজুর আলম অনিক জয়ের নূর মাখি  // সরদার ফাতিমা পীরগঞ্জে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মাধবদীতে আদালতের রায় তামিল করতে গেলে হামলা, ম্যাজিস্ট্রেট-পুলিশের ওপর চড়াও ভূমিদস্যুরা – ২ জন আটক আটোয়ারীতে রাস্তার সিসি ঢালাইয়ে অনিয়ম, সাংবাদিককে হুমকি এনসিপির তুষারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দিলেন নীলা ইসরাফিল হরিপুরে শেয়ালের কামড়ে আহত-৭ পলাশবাড়ীতে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে নারিকেল চারা বিতরণ ভাঙ্গাচোরা ঝুঁপড়িতে থাকা সেই বৃদ্ধাকে নতুন ঘর উপহার দিল জামায়াতে ইসলামী রায়পুরায় বন বিভাগের ২৬ শতাধিক গাছ কেটে অফিসার্স ক্লাব নির্মাণ, সমঝোতার চেষ্টা চলছে

পঞ্চগড়ের আটোয়ারীর সাবেক ইউএনওর মিনি লাইব্রেরী থেকে দৃষ্টিনন্দন গ্রন্থকুটির

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ১৭৫ বার পড়া হয়েছে

শহীদুল ইসলাম শহীদ, পঞ্চগড় ।। জ্ঞানের আঁধার দূর করে আলোকিত করে তুলে বই। গড়ে তোলে জ্ঞানী ও আলোকিত মানুষ। এমন সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলতে পঞ্চগড়ের প্রাক্তন ইউএনও মো. মুসফিকুল আলম হালিম আটোয়ারীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্ব পালনকালীন অফিসটিই বানিয়েছিলেন মিনি লাইব্রেরী। সেই মিনি লাইব্রেরিটি দৃষ্টিনন্দন গ্রন্থকুটির হিসেবে পূর্ণতায় রূপ নিয়েছে । অসাধারণ এক সৃজনশীল ইউএনও ছিলেন তিনি।
গত ৮ ফেব্রুয়ারী রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো: হাবিবুর রহমান আটোয়ারী পরিদর্শনে এসে ইনোভেশন কার্যক্রম হিসেবে নবনির্মিত এই গ্রন্থকুটির পরিদর্শন করেছেন। পরিষদের অভ্যন্তরে সিরামিক ইটের তৈরি একতলা ভবনে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন গ্রন্থকুটিরটি দেখে মুগ্ধ হয়ে উন্নয়ন কাজের জন্য ১ লাখ চার হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়ার আশ্বাস দেন। পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম, উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম, নির্বাহী অফিসার রাসেদুল হাসান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) শায়লা সাঈদ তন্বীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর আটোয়ারী উপজেলায় ইউএনও হিসেবে যোগদান করেন মো. মুসফিকুল আলম হালিম। চলতি সালের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বদলিজনিত কারণে বদলী হন তিনি। এ সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ভয়াবহ মাদকাসক্ত পরিবেশ থেকে রক্ষা করতে পাঠাভ্যাসের দিকে ফিরিয়ে আনতে কয়েক শতাধিক বই দিয়ে নিজ অফিস কক্ষটিতে বানান মিনি লাইব্রেরী। সরকারিভাবে ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে আত্ম-উন্নয়নমূলক বই ক্রয় করা হয়।
শিক্ষার্থীরা সাধারণত প্রতি মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার লাইব্রেরী থেকে বই সংগ্রহ ও ফেরত দিতে আসতো। তারা প্রতিনিয়ত বই বাসায় নিয়ে পড়া শেষে জমা দিয়ে আবার নতুন বই নিয়ে পড়তে থাকে। বই পড়া শেষে অংশ নেয়, বুক রিভিউতে। যারা ১৫ টি বই পড়ে শেষ করে তাদেরকে দেয়া হতো পুরস্কার। কেউ কেউ ৫০ টির অধিক বই পড়েছে। এ লাইব্রেরীর নিয়মিত পাঠক বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মুশফিকা রেজা, প্রীতিলতা, সাদিয়া ইসলাম প্রজ্ঞা, নুসরাত জাহান ঐশ্বী, মাফি, নদী, ঝিনুক রানী, মাম্পি, বিন্দু রানীসহ শতশত শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থী আলিফ আল হুমায়রা অনু ও ঝিনুক রানী জানান, ইউএনও মুসফিকুল আলম হালিম স্যারের গড়া মিনি লাইব্রেরী এখন দৃষ্টিনন্দন গ্রন্থকুটিরে রূপ নিয়েছে। এতে আমাদের অনেক উপকার হয়েছে। আমরা হুমায়ুন আহমেদ, জাহানারা ইমামসহ অনেক লেখকের বই পড়ে বুক রিভিউ দিয়েছি। পাঠ্যপুস্তকের বাইরে অনেক কিছুই জেনেছি। আর ইউএনও স্যার বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি আমাদেরকে ভবিষ্যত জীবন গড়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন।
এদিকে লাইব্রেরীর পাশাপাশি প্রাক্তন ইউএনও বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া প্রায় ২০-২৫ জন শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তা করেছেন। সরকারি কলেজে চান্স পাওয়া বেশ কিছু শিক্ষার্থীর মাসিক খরচ বহন করে এগিয়ে দিয়েছেন তিনি। এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঢাকা কলেজের শামীম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিমা, পঞ্চগড় মহিলা কলেজের ইশা মনি, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপন, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া লিমন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদিয়া, দয়াল বর্মনসহ আরও অনেকে। এছাড়াও একজন তালাকপ্রাপ্তা নারীর নার্সিং ইন্সটিটিউটে চান্স পাওয়ায় আর্থিক সহযোগিতা করে লেখাপড়ায় এগিয়ে দিয়েছেন এই ইউএনও।
এছাড়াও ইতিহাস-ঐতিহ্য, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের গল্প, ভূমিহীন ও গুহহীনদের ঘর নির্মাণ, প্রায় ৭০ বিঘা সরকারি খাস জমি উদ্ধার, ৭১ আশ্রয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, আশ্রয়ন প্রকল্পে ‘মসজিদুত তাকওয়া মসজিদ, মসজিদে হানজালা’ সহ বিভিন্ন মসজিদ ঘর নির্মাণ, ফুটবল একাডেমি, শিশু পার্ক, স্মার্ট ব্যাডমিন্টন কোর্ট, ‘সবুজ বিন’ স্থাপন, সাইট্রাস উদ্ভিদের বাগান তৈরি, বীর মুক্তিযোদ্ধা চত্বর, ডায়াবেটিস হাসপাতাল উন্নয়ন, ৩৩ টি জলমহাল সংস্কারের মাধ্যমে সায়রাতভুক্ত করে ইজারা প্রদান, কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করে ‘পাখির অভয়াশ্রম’এর কাজের বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন তিনি।
নাজমা বেগম নামের এক অভিভাবক জানান, মিনি লাইব্রেরী থেকে গ্রন্থকুটির উদ্যোগটি ছিল প্রাক্তন ইউএনও মুসফিকুল আলম হালিম স্যারের। এটাতে অনেক উপকৃত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আমার মেয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী সে পাঠাগারের পাঠক। সেখানে বই পড়ে তার মেধা বৃদ্ধি পেয়েছে। তার অনেক শিক্ষার্থী উপকৃত হচ্ছে। এমন উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য ধন্যবাদ জানাই।
অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক রমজান আলী বলেন, গ্রন্থকুটিরটি আমাদের এলাকার জন্য যুগান্তরকারী উদ্যোগ ছিল। এখানে এখন শতশত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরণের বই পড়ে উপকৃত হচ্ছে। তারা বইয়ের নেশায় থাকায় ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের আসক্তি থেকে অনেকটা দূরে থাকছে। গ্রন্থকুটির নির্মাণ করায় ধন্যবাদ জানাচ্ছি। একই কথা বলেন ফকিরগঞ্জ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজা আল মামুন।
পঞ্চগড় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ বলেন, ওই ইউএনওর মধ্যে দেশপ্রেম দেখেছি। উনি একজন সৃজনশীল ইউএনও ছিলেন। তিনি নিয়মিত সরকারি কাজের পাশাপাশি নানান সামাজিক উদ্যোগে জড়িত ছিলেন। কোথাও সরকারি কাজে গেলে আশেপামের বিদ্যালয়গুলোতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নানান বিষয়ে কাউন্সেলিং করতেন। স্মার্ট ফোন, মাদকের কুফল, আত্মহত্যা, প্রেম, নীতি নৈতিকতা, জীবনে সাফল্য অর্জনের কৌশল নিয়ে আলোচনা করতেন। আমার সকল উপজেলায় এমন ইউএনও দরকার।
কুড়িগ্রাম থেকে সাবেক ইউএনও মুসফিকুল আলম হালিম বলেন, শিক্ষার্থীদের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ও মাদক থেকে দূরে রাখার জন্যই উপজেলায় স্থাপন করা হয় এই গ্রন্থকুটির। ইউএনও মিনি লাইব্রেরী থেকে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে জ্ঞানের মশাল তাদের হাতে দেয়া হয়েছে। জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়ে এরাই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বে। তারা যেন দুর্নীতিমুক্ত থাকে, তারা যেন আত্মবিশ্বাসী থাকে, তারা যেন তাদের স্বপ্নকে ছুঁতে পারে, তারা যেন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ও বুকে অদম্য সাহস নিয়ে সমুদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে এটাই প্রত্যাশা।
আটোয়ারী উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ইউএনও মুসফিকুল আলম হালিম সাহেব এ উপজেলায় যোগদানের পর অনেক ভালো ও ইনোভেটিভ কাজ করেছেন। তার মধ্যে শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে নিজ উদ্যোগে মিনি লাইব্রেরী, পরবর্তীতে একটি দৃষ্টিনন্দন গ্রন্থকুটির নির্মাণের কাজও হয়েছে তার উদ্যোগেই। তার দায়িত্ব পালন নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন ও মানুষ ্র প্রকৃত সেবা পেয়েছে। #

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: বাংলাদেশ হোস্টিং