শহীদুল ইসলাম,পঞ্চগড়।। ভারত থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আসা দুটি বন্য হাতি অবশেষে ভারতেই ফিরে গেছে। মঙ্গলবার রাতে হাতি দুটি বাংলাবান্ধা ইউপির অন্তর্গত ১৮ বিজিবি গোয়ালগছ ক্যাম্পের বিপরীতে ৭৩০ এর নিকটবর্তী বিএসএফ ব্যাটালিয়নের ফাঁসিদেওয়া ক্যাম্প এলাকা দিয়ে নদী পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করে হাতি দুটি। দিনভর হাতির আক্রমণের ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত ছিল স্থানীয়রা। তবে এ ঘটনায় নুরুজ্জামান (২৫) নামের এক বাক প্রতিবন্ধী মারা গেছে। সকালে খবরের তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে.কর্নেল যুবায়েদ হাসান।
বিজিবি জানায়, গতকাল মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে পঞ্চগড় ১৮ বিজিবির অধীনস্থ রওশনপুর বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সীমান্ত পিলার ৭৩৫/২ এস এর মধ্যবর্তী ইসলামবাগ এলাকা দিয়ে ২টি ভারতীয় বন্য হাতি বাংলাদেশে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। পরে হাতি দুটি তিরনইহাট এলাকা হয়ে গোয়ালগছ বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্তে কাশিমগঞ্জ এলাকায় এসে অবস্থান নিয়ে বেপরোয়া হয়ে কিছু বাড়ি ঘরে সামান্য ভাংচুর করে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের নিরাপত্তার স্বার্থে বিজিবি, থানা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। অনুপ্রবেশ করা হাতি দুটিকে বিরক্ত না করতে তাদেরকে সরিয়ে দেয়া হয়।
পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিজিবি সদর দপ্তরের নির্দেশনায় বিকেল ৪টায় কাশিমগঞ্জ সীমান্ত এলাকার ৭৩০ পিলারে বাংলাদেশ ও ভারতীয় বনবিভাগের প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধনের জন্য পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পতাকা বৈঠকে ভারত হতে বাংলাদেশে আসা হাতি দুটি ভারতে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য বাংলাদেশি বনবিভাগের সদস্যদের সাথে ভারতীয় বনবিভাগ বিভাগের সদস্যদের সাথে প্রয়োজনীয় আলোচনা হয়।
এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে হাতি দুটি স্ব-উদ্যোগে সীমান্তের শুন্য লাইনের দিকে ছুটে আসলে সন্ধ্যার দিকে মানসিক অসুস্থ্য নুরুজ্জামান (২৮) না বুঝে হাতির পিছনে গেলে হাতির আঘাতে হয়। এতে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে পঞ্চগড় জেলা আধুনিক সদর হাসপাতালে মারা যায়।
সন্ধ্যার পর হতে উভয় দেশের বনবিভাগের কর্মকর্তা, বিজিবি, বিএসএফ ও গ্রামবাসীদের প্রচেষ্টায় অভিনব উপায়ে মশাল জ্বালিয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে হাতি দুটি সীমান্ত পিলার ৭৩০ দিয়ে অতিক্রম করে হাতি দুটি ফাঁসিদেওয়া সীমান্তে প্রবেশ করানো সম্ভব হয়। পরে হাতি ভারতের অভ্যন্তরে চলে গেলে বিষয়টি বিজিবিকে নিশ্চিত করেন ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
বাংলাবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান কুদরত ই খুদা মিলন জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাতি দুটি বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের কাশিমগঞ্জে অবস্থান করায় খুবই আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন এলাকাবাসী। পরে রাতে গ্রামবাসিদের অভিনব প্রচেষ্টায় মশাল জ্বালিয়ে বিজিবি ও উভয় দেশের বনবিভাগের সদস্যের সহযোগিতায় ভারতে ফিরে যায় হাতি দুটি। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক কেটে স্বস্তি ফিরেছে। এ জন্য বিজিবি, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।