ফজলার রহমান গাইবান্ধা থেকে ঃগাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় সরকারি প্রকল্প সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাওয়ায় এক সাংবাদিকের সঙ্গে অশোভন ও অপেশাদার আচরণ এবং অফিসে প্রবেশে বাধা দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (LGED)-এর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. হেলালুর রহমান হেলালের বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি ঘটে গত মঙ্গলবার (১৭ জুন ২০২৫) দুপুরে উপজেলার এলজিইডি কার্যালয়ে। অভিযোগকারী সাংবাদিক মো. ফেরদাউছ মিয়া দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার পলাশবাড়ী উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করছেন।
সাংবাদিক মো. ফেরদাউছ মিয়া জানান, তিনি “২০২৪-২৫ অর্থবছরের GRRIIP প্রকল্প” এর অগ্রগতি ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত তথ্য জানতে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর অফিসে যান।
“তথ্য চাওয়ার কথা বলতেই প্রকৌশলী হেলালুর রহমান রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং বলেন, আমার কাছে তথ্য নিয়ে আমার বিরুদ্ধেই নিউজ করবেন! রুম থেকে বের হয়ে যান, আমার অফিসে সাংবাদিক ঢুকা নিষেধ।’ এরপর তিনি আমাকে বের করে দেন এবং স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কোনো তথ্য দেবেন না।”
এই আচরণে হতবাক সাংবাদিক বলেন, “এটি একজন সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে চরম দায়িত্বহীন আচরণ। একজন পেশাদার সংবাদকর্মী হিসেবে তথ্য চাওয়া আমার সাংবিধানিক অধিকার। অথচ তথ্য তো দেননি, উল্টো হুমকি ও তিরস্কারের শিকার হতে হয়েছে।”
উল্লেখ্য, স্থানীয়ভাবে অভিযোগ রয়েছে—GRRIIP প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। তথ্য চাইলে তা ‘গোপন’ করা হয়, যা প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বচ্ছতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
অথচ ২০০৯ সালের তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী—সরকারি কর্মচারী বা দপ্তরের দায়িত্ব রয়েছে, নাগরিকদের চাওয়া তথ্য সরবরাহ করা।সরকারি কর্মকর্তা যদি তথ্য গোপন করেন বা দুর্ব্যবহার করেন, তা হলে সেটি কেবল প্রশাসনিক অনিয়ম নয়, বরং আইন লঙ্ঘনের শামিল।
ঘটনাটি নিয়ে পলাশবাড়ীর স্থানীয় সাংবাদিক সমাজ গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।তারা বলেন, “একজন সরকারি কর্মকর্তা যখন তথ্য জানতে চাওয়া সাংবাদিককে হুমকি দেন ও অফিস থেকে বের করে দেন, তখন সেটি শুধু ব্যক্তির প্রতি অপমান নয়, বরং পুরো গণমাধ্যম ও জনগণের অধিকারকে অপমান করার সামিল।”
এতে সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা যেমন হুমকির মুখে পড়ে, তেমনি সাধারণ মানুষের ‘তথ্য জানার অধিকার’ও সংকুচিত হয়, যা গণতান্ত্রিক নীতিমালার পরিপন্থী।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী তপন চন্দ্র জানান, “উপসহকারী প্রকৌশলীর এমন আচরণ করা একদমই ঠিক হয়নি।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল আলম বলেন,
“ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি—উপসহকারী প্রকৌশলী মো. হেলালুর রহমান হেলালের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক, যাতে ভবিষ্যতে কোনো সরকারি কর্মকর্তা আর এমন দায়িত্বহীন আচরণ করতে সাহস না পায় এবং নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার যথাযথভাবে নিশ্চিত হয়।