ফজলার রহমান গাইবান্ধা থেকে ঃ গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)-তে ঘুষ, অনিয়ম ও দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগ ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছে। এসব অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন উপসহকারী প্রকৌশলী মোঃ হেলালুর রহমান হেলাল, যার বিরুদ্ধে স্থানীয় ঠিকাদার, জনপ্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজের অসংখ্য অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি বহাল তবিয়তে নিজ অবস্থানে থেকেও নির্বিঘ্নে ‘দাদাগিরি’ চালিয়ে যাচ্ছেন। দেখার কেউ নেই!
স্থানীয় ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, হেলাল বিগত বছরগুলোতে পলাশবাড়ী উপজেলায় বাস্তবায়িত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প—যেমন(RDRIIP-2) সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প,(ADP)
উন্নয়ন সহায়তা প্রকল্প,(GRRIIP)
বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের জেলা সমূহের পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন
প্রকল্প”(LGED Rural Road Maintenance) কৃষি সড়ক মেরামতপ্রকল্প,(PEDP-4)-
প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প-
এসব প্রকল্পে উপসহকারী প্রকৌশলী হেলাল সরাসরি
ঠিকাদারদের কাছ থেকে বিল ছাড়ের সময় শতকরা ৫% থেকে ১০% পর্যন্ত “কমিশন” গ্রহণ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঠিকাদার জানান, “কাজ শেষ করলেও বিল পেতে হলে হেলাল স্যারের ‘খরচপাতি’ দিতে হয়। না দিলে বিল আটকে রাখা হয়। চা-নাস্তা তো নিয়মিত, কখনো সরাসরি টাকাও দিতে হয়।”
সম্প্রতি (GRRIIP) প্রকল্প সংক্রান্ত তথ্য জানতে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার প্রতিনিধি হেলালের কাছে গেলে তিনি সাংবাদিকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং বলেন, “সাংবাদিকদের এসব জানার কোনো অধিকার নাই।” এই বক্তব্য সরাসরি তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯–এর লঙ্ঘন। সরকারি কর্মচারী হিসেবে এটি আইনবহির্ভূত এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজের অভিযোগ, হেলাল এলজিইডির প্রকল্পগুলোতে নিয়ম-নীতি না মেনে অদক্ষ, প্রভাবশালী কিংবা ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেন, যারা নিম্নমানের কাজ করে পার পেয়ে যান। এর ফলেই সদ্য নির্মিত অনেক রাস্তা কয়েক মাসের মধ্যেই ভেঙে পড়ে।
পলাশবাড়ীর এক ইউপি সদস্য বলেন, “রাস্তার কাজ খারাপ হচ্ছে, বারবার বললেও হেলাল তা শোনেন না। উল্টো বলেন, ‘উপরে যারা আছে, তারাও জানে।’ তার মানে কি পুরো সিস্টেমটাই দুর্নীতিতে ঢেকে গেছে?”
স্থানীয়দের একটাই প্রশ্ন—“সরকার যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছে, তখন হেলালের মতো দুর্নীতিবাজরা কীভাবে বছরের পর বছর বহাল তবিয়তে থাকেন?” এমন নীরবতা কি কেবল প্রশাসনিক ব্যর্থতা, নাকি এর পেছনে রয়েছে প্রভাবশালী চক্রের ছত্রছায়া।
স্থানীয় সাংবাদিক মহল ও সুশীল সমাজ দাবি তুলেছে, হেলালের বিরুদ্ধে দ্রুত বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে তার কর্মকাণ্ডের স্বচ্ছ তদন্ত ও প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং এলজিইডি সদর দপ্তরের মনিটরিং ইউনিটকে হস্তক্ষেপ করতে হবে।
একজন হেলালের মতো ঘুষখোর কর্মকর্তার কারণেই একটি গোটা সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, জনগণের আস্থা বিনষ্ট হচ্ছে। এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে পলাশবাড়ীতে উন্নয়নের বদলে “দুর্নীতির দৃষ্টান্ত” হয়ে দাঁড়াবে প্রতিটি প্রকল্প।