সটাফ রিপোর্টার ঃনরসিংদীর মাধবদীতে আদালতের নাজিরের বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে সরকারি কাজে বাধা এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাস সৃষ্টির ঘটনা ঘটেছে। হামলায় আদালতের দুই জারীকারক ও একজন ঢুলি গুরুতর আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় মাধবদী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ জুন ২০২৫ তারিখে নরসিংদী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির মোঃ মাহবুবুর রেজা সিনিয়র জেলা জজের অনুমতিক্রমে বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, নরসিংদী সদরের ৬৯৬/২০২১ নং মোকদ্দমার তফসিল বর্ণিত সম্পত্তিতে দখল অর্পণের জন্য ঘটনাস্থলে যান। তার সঙ্গে ছিলেন এসআই মোঃ মোমেনসহ ১০ জন পুলিশ সদস্য, এডভোকেট কমিশনার জনাব আব্দুল আলীম, আদালতের জারীকারক মোঃ আলম মিয়া ও মোঃ রোমান ভূঁইয়া এবং ঢুলি মানিক চন্দ্র দাস।
দুপুর আনুমানিক ১টায় তারা মাধবদী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন দেওয়ানি মোকদ্দমা ৬৯৬/২০২১ এর তফসিল বর্ণিত সম্পত্তির ডিক্রিদারী পক্ষে দখল প্রদানের জন্য ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ১নং বিবাদী মনির (৩২) এর নেতৃত্বে এজাহারভুক্ত ১২ জন বিবাদী এবং অজ্ঞাতনামা ৫০-৬০ জন ব্যক্তি হকিস্টিক, রড, রামদা, চাইনিজ কুড়াল, চাপাতি, কিরিছ, ইট, লাঠি সোঁটা এবং ব্যাগের মধ্যে বিস্ফোরক দ্রব্য ককটেল নিয়ে তাদের ঘিরে ফেলে।
নাজির মোঃ মাহবুবুর রেজা নিজের পরিচয় দিলে বিবাদীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি হামলা শুরু করে এবং “ভুয়া ভুয়া” শ্লোগান দিতে থাকে। এসময় জারীকারকদ্বয় তাদের নিবৃত্ত করতে বললে ৩নং আসামী ছাদেক (৩৫) জারীকারক রোমান ভূঁইয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় আঘাত করে গুরুতর জখম করে। ১৩নং আসামী রায়হান (২৫) ইট দিয়ে জারীকারক রোমানের পিঠে ও কোমরের বাম পাশে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে।
৬নং আসামী রাজিব (৩৩) ও ৪নং আসামী মুক্তার (৩৫) ঢুলি মানিক চন্দ্র দাসের কাছ থেকে তার ঢোল ছিনিয়ে নিতে এলে ধস্তাধস্তি হয়। তখন ৩নং আসামী ছাদেক (৩৫) হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে ঢুলি মানিক চন্দ্র দাসকে মাথা ও কোমরসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এই সুযোগে ১১নং আসামী রাজিব মিয়া (৩৪) ঢুলির প্যান্টের ডান পকেট থেকে ২১,০০০ টাকা মূল্যের একটি রেডমি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল এবং ৮নং আসামী আবু তাহের (৩০) তার বাম পকেট থেকে ৫০৫০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। ৭নং আসামী আমির হোসেন (২৮) ও ৯নং আসামী শরীফ (২৬) লোহার রড দিয়ে জারীকারক মোঃ আলম মিয়াকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলাফুলা জখম করে।
১নং আসামী মনির (৩২), ছাদেক (৩৫) ও মুক্তার (৩৫) সহ অন্যান্য আসামীরা নাজির মোঃ মাহবুবুর রেজা এবং এডভোকেট কমিশনার জনাব আব্দুল আলীমকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে রাখে। এসময় ১নং আসামী মনির নাজিরের বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতি ও হত্যার হুমকি দেয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
আসামী জাকির (২৬), জামাল (৩৪), রাজিব (৩৩), আমির হোসেন (২৮), আবু তাহের (৩০), শরীফ (২৬), রাসেল মিয়া (৪০), রাজিব মিয়া (৩৪), রাব্বি (২৮) সহ অজ্ঞাতনামা আসামীরা পুলিশ সদস্যদের লাঠি, হকিস্টিক ও লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে। ঘটনাস্থলে মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়।
পরবর্তীতে, ২৬ জুন ২০২৫ তারিখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করার পর মাধবদী থানা পুলিশ সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে ঘটনাস্থলে এসে অবরুদ্ধদের উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে যায়। এসময় আসামীরা থানার সামনে এসেও জড়ো হয়।
আদালতের জারী মামলার কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি এবং আদালতের কর্মচারীদের গুরুতর আহত করার উদ্দেশ্যে আসামীরা এ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগে দাবি করা হয়েছে। এই হামলায় জারীকারক রোমান ভূঁইয়া, জারীকারক মোঃ আলম মিয়া এবং ঢুলি মানিক চন্দ্র দাস গুরুতর আহত হওয়ায় তাদের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার কারণে অভিযোগ দায়ের করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাজির মোঃ মাহবুবুর রেজা। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।