শ্যামলী আকতার।। নূরুল ইসলাম দেওয়ান – নামটি ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক চিরচেনা ও শ্রদ্ধাভাজন মুখ। যিনি প্রায় ২৮ বছর ধরে বাংলাদেশ বেতারে চুক্তিভিত্তিক সঙ্গীত প্রযোজক ও গীতিকার হিসেবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছেন।
১৯৯৯ সালের ১ জুলাই তিনি বাংলাদেশ বেতারে সঙ্গীতের সেবা শুরু করেন। এরপর নানা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, পরিবর্তন আর প্রভাবের মধ্যে থেকেও তিনি নিজের নীতিবোধ ও সৎ মানসিকতাকে অটল রেখেছেন। বিএনপি সরকারের সময়ে পুনরায় নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে কোনো প্রকার অন্যায়, অবিচার বা অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ না করে নিরলসভাবে সঙ্গীত চর্চা ও সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বেতারে ৩ শতাধিক শিল্পী তাঁর স্নেহ ও সহানুভূতিপূর্ণ আচরণের জন্য তাঁকে পিতৃতুল্য মনে করেন। বেতারের প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গীত রেকর্ডিং ও প্রযোজনার কাজেই তাঁর অবদান রয়েছে, অথচ বিনিময়ে তিনি কোনো অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দাবি করেননি। আজও সঙ্গীত বিদ্যালয়ে গরিব ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনামূল্যে গান শেখান, তাদের সুরের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে পাশে থাকেন।
যে মানুষটি নিজের জন্য কোনোদিন বেশি কিছু চায়নি, তাঁর ঘর ভাড়াও অত্যন্ত সাদামাটা – তিন হাজার টাকার টিনের ছাপরায় জীবনের সংগ্রাম বয়ে চলেছেন। প্রতিমাসে মাত্র ১৭-১৮ হাজার টাকার সন্মানী নিয়ে সংসার চালালেও তাঁর মন আকাশের চেয়ে বিশাল।
তিনি কখনো কারও ক্ষতি করেননি, কখনো কারও কাছ থেকে দশ টাকা অন্যায়ভাবে নেননি। বরং সংগঠন আর সহকর্মীদের স্বার্থে স্বেচ্ছায় সভাপতির পদ ছেড়ে দিয়ে উদারতার উদাহরণ রেখেছেন।
নূরুল ইসলাম দেওয়ান শুধু একজন সঙ্গীতকর্মী নন, তিনি একজন মানুষ হিসেবে উদার, বিনয়ী, ও অসাধারণ হৃদয়বান। তাঁর সংগ্রামী জীবন ও সৃজনশীল অবদান নতুন প্রজন্মকে সৎ ও মানবিক হতে অনুপ্রেরণা দেয়।
আমরা তাঁর সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু এবং সঙ্গীত-সাধনায় সাফল্য কামনা করি। তিনি যেন আরো বহু বছর সঙ্গীতের আলো ছড়িয়ে যান মানুষের হৃদয়ে।