1. info@www.dailyzhornews.com : দৈনিক ঝড় :
সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ০১:৩০ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :

বান্দরবানে কেএনএফ এর সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: সোমবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৩
  • ১৬০ বার পড়া হয়েছে

ভ্রামমান প্রতিনিধি।।উপজাতি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির প্রথমবারেরমত স্বশরীরে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

র‌বিবার (৫ নভেম্বর) সকাল ১১ টায় রুমা উপজেলার মুনলাই পাড়ার কমিউনিটি সেন্টারে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সভাপতি বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লার নেতৃত্বে ৫ সদস্য এবং কেএনএফ এর ১০ সদস্য এতে অংশ নেয়। এছাড়াও প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস‍্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠককে ঘিরে মুনলাই পাড়ায় নেয়া হয়েছে কঠিন নিরাপত্তা ব্যবস্থা।সেনাবাহিনী,পুলিশ ও বিজিবিসহ মোতায়েন রয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সদস্য। দুপক্ষের মধ্যে এর আগে অনেক বার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও সরাসরি এটিই প্রথম বৈঠক। বৈঠকে কেএনএফ এর পক্ষ থেকে ৬ দফা দাবী উত্থাপন করা হয়েছে। সেগুলো নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে এবং কেএনএফ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে বৈঠকে আলোচনা হয়।তবে সিদ্ধান্তের বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।এছাড়াও আগামী মাসের মাঝামাঝিতে আবার দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়।

যে চার শর্তে কেএনএফের সাথে সমঝোতা হয়

১. উদ্ভূত যেকোনো সমস্যা সংলাপের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে উভয় পক্ষ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। শান্তি প্রতিষ্ঠা কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে কেএনএফ কোন প্রকার সশস্ত্র তৎপরতায় লিপ্ত হবে না এবং আঞ্চলিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্ট অব্যাহত রাখবে। এই উদ্দেশ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিতিশীলতা রক্ষায় নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখা হবে।

২. সকল কুকি সম্প্রদায়ভুক্তদের নিজ আবাসস্থলে ফেরত আসার ব্যাপারে অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য সরকার পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

৩. কেএনএফ’র পক্ষ থেকে কুকি সম্প্রদায়ের ভাগ্যোন্নয়নে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য সহায়তা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে কর্মসংস্থান বিষয়ে প্রস্তাবনা প্রেরণ করবে যা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য বিবেচনা করা হবে।

৪. শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরবর্তী সংলাপ আগামী ডিসেম্বর মাসের ১৩ তারিখ অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকের তারিখ উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারিত হবে। পরবর্তী সংলাপ পর্যন্ত কেএনএফ সকল প্রকার সশস্ত্র তৎপরতা থেকে বিরত থাকবে।

শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি এবং কেএনএফের মধ্যে সম্পাদিত উক্ত সমঝোতা স্মারকে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা এবং কেএনএফের প্রতিষ্ঠাতা নাথান বমের সিনিয়র উপদেষ্টা এবং টিম লিডার কেএনএফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ফর পিস ডায়লগ এন্ডার লালএং লিয়ান স্বাক্ষর করেন।

বৈঠকে কেএনএফের তরফে শাস্তি কমিটির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নিকট ৬ দফা দাবীনামা পেশ করা হয়।

কেএনএফের ছয় দফা দাবী হলো:

১. প্রান্তিক অঞ্চলের অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর বিলীয়মান সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য রক্ষাসহ শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সার্বিক উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে “কুকি-চিন টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল” (সংক্ষেপে ‘কেটিসি’) নামে স্বায়ত্তশাসিত পরিষদ গঠন করা।

২. ভূমি ও পর্যটন বিষয়ক সংক্রান্ত সকল কর্মকাণ্ড সমূহের সর্বময় ক্ষমতা কেটিসি’র উপর সম্পূর্ণভাবে অর্পণ করা।

৩. উক্ত অঞ্চলে পুলিশ বাহিনীর নিয়োগ প্রদানসহ সকল ক্ষমতা কেটিসির উপর অর্পণ করা।

৪. কেএনএফ’র সশস্ত্র আন্দোলনকালীন কেএনএফ’র সশস্ত্র সদস্যসহ অন্যান্য নিরীহ ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতারি পরোয়ানা, হুলিয়া জারি অথবা অনুপস্থিতিকালীন সময়ে বিচারে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে, অস্ত্রসমর্পণ ও স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তনের পর শীঘ্রই সম্ভব তাদের বিরুদ্ধে সকল মামলা, গ্রেফতারি পরোয়ানা, হুলিয়া প্রত্যাহার করা এবং অনুপস্থিতকালীন সময়ে প্রদত্ত সাজা মওকুফ করা। কেএনএফ’র কোন সশস্ত্র সদস্য বা কেএনএফ-এর নামে নিরীহ ব্যক্তিরা জেলে আটক থাকলে তাদেরকেও বিনাশর্তে মুক্তি প্রদান করতে হবে।

৫. ৭১ সালের পর থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের কারণে এবং ২০২২ ও ২০২৩ সালে কুকি-চিন অঞ্চলে ব্যাপক সেনা অভিযানের ফলে পার্শ্ববর্তী অঞ্চল সমূহে তথা ভারতের মিজোরাম এবং মিয়ানমারের পালেতুয়া এলাকায় পালিয়ে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে আশ্রয় গ্রহণ করা কুকি-চিন শরণার্থীদেরকে সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে এনে পূণর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৬. কুকি-চিন আর্মড ব্যাটেলিয়ন (কেএবি) নামে সশস্ত্র পদাতিক ব্যাটালিয়ন গঠন করতে হবে ।

উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্ট থেকে কেএনএফ পাহাড়ে তৎপরতা শুরু করে। এদের সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে এ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর ৫ সদস্যসহ ২২ জন নিহত হয়। কেএনফের ১৭ সদস্যকে আটক করা হয়। এই সশস্ত্র সংগঠনটির সাথে নতুন গজিয়ে ওঠ জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। জঙ্গিদের টাকার বিনিময়ে কেএনএফ প্রশিক্ষণ দিতো বলেও অভিযোগ ছিল। কেএনএফের এই তৎপরতায় বান্দরবানে পর্যটন শিল্পের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। বান্দরবানের কয়েকটি উপজেলায় পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয় প্রশাসন থেকে। পাহাড়ী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট এর বিপথ গামী সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লার নেতৃত্বে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দদের নিয়ে চলতি বছর জুন মাসে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করা হয়।পাহাড়ে চলমান এই সংঘাত নিরসনে গঠিত শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সাথে এই প্রথম কেএনএফ সরাসরি বৈঠকে বসেছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: বাংলাদেশ হোস্টিং